আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

উম হানি ও মুহাম্মদ: ইসলামের মহানবীর প্রথম ভালবাসা (পর্ব ৯)

লিখেছেন আবুল কাশেম


মক্কা বিজয়ের পর নবী কোথায় গেলেন?

নবী মুহাম্মদ বাহুবলে মক্কা দখল করলেন। কয়েকজন ছাড়া সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করলেন। মক্কার লোকেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সবাই আশা করছিল, মুহাম্মদ পৈত্রিক ভিটেমাটিতে অবস্থান করবেন, যথা তাঁর চাচা আবু তালেবের গৃহে। কিন্তু নবী তা না করে কাবার সন্নিকটে নিজের থাকার জন্য একটা তাঁবু গাড়লেন। সেখানে তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা ফাতেমা ও অন্যান্য নিকটাত্মীয়। তাঁবুটি যে উম হানি বা আবু তালেবের গৃহের খুব কাছেই ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আমরা ওপরে একটা হাদিসে দেখেছিলাম যে, উম হানি যখন নবীর তাঁবুতে গেলেন, তাঁর গৃহে আশ্রিত দুই দেবরের প্রাণভিক্ষা করতে যাদেরকে হযরত আলী হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, তখন নবী গোসল সারলেন এবং ভোরের নামায পড়লেন। আমরা ধরে নিতে পারি এটা ফজরের নামাযের সময় ছিল - যা সূর্য ওঠার আগেই হয়। এই ঘটনা থেকেই অনুমান করা যায় যে, নবীর তাঁবু ছিল উম হানির গৃহের কাছেই। তখন উম হানির গৃহে যে তাঁর স্বামী হুবায়রা ছিল না, তা একেবারে পরিষ্কার। নবী ফজরের নামায শেষ করলেন। তারপর উম হানির সাথে কথাবার্তা বললেন এবং তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে, উনি (উম হানি) যাকে আশ্রয় দেবেন, তারা তাঁর নিরাপত্তা পাবে। এখন ব্যাপার হচ্ছে - এত ভোরে মুহাম্মদ উম হানিকে তাঁর তাবুতে আপ্যায়ন করার পর কী করলেন? মুহাম্মদ কি উম হানির গৃহে তাঁর পদধূলি দিলেন?

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা অনেক ইসলামী পণ্ডিতেরা কৌশলে এড়িয়ে যেতে চান। কারণ যদি দেখান হয় যে, নবী উম হানির গৃহে তশরীফ নিয়েছিলেন তবে উম হানি এবং মুহাম্মদের মাঝে যে পরকীয়া প্রেম তখনও জীবিত ছিল, তার প্রমাণ দেওয়া যায়। আর এই কর্ম যদি নবী করে থাকেন, তবে উনি নিজের আইন নিজেই ভঙ্গ করেছেন প্রমাণিত হয়। এই ঘটনা আরও প্রমাণিত করে যে, উম হানির স্বামী তাঁর স্ত্রীর সাথে থাকতেন না। এর কারণ আগে দেওয়া হয়েছে। পরে আরও জোরালো প্রমাণ দেখান হবে।

এই প্রসঙ্গে এখন দেখা যাক কিছু হাদিস এবং ঐতিহাসিক দলিল।


প্রথমেই দেখা যাক কয়েকটি তিরমিজি হাদিস।
১. আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা বর্ণনা করলেন: "উম হানি ছাড়া আর কেউই আল্লাহর রসূলকে জুহার (দুহা) নামায পড়তে দেখেনি। উনি (উম হানি) বললেন: "মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল তাঁর গৃহে (উম হানির গৃহে) ঢুকলেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং ঐচ্ছিক আট রাকাত নামায পড়লেন। তিনি নবীকে এত লঘুভাবে আর কোনোদিন নামায পড়তে দেখেননি। কিন্তু তিনি রুকু (মাথা নত করা) ও সিজদা (স্যাষ্ঠাঙ্গ করা) ঠিক মতই করলেন। (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ১, হাদিস নম্বর ৪৭৪, পৃঃ ৪৭৬-৪৭৭; অনুবাদ লেখকের)
২. উম হানি বললেন: মক্কা বিজয়ের সময় আমি আল্লাহর রসূলের কাছে গেলাম। আমি দেখলাম, তিনি গোসল করছেন। আর ফাতেমা তাঁকে একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে অন্তরাল করে রেখেছেন। আমি তাঁকে সালাম জানালাম। তিনি বললেন: "এ কে?" আমি বললাম, "আমি উম হানি।" তিনি বললেন: "স্বাগতম উম হানি।" (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ৫, হাদিস নম্বর ২৭৩৪, পৃঃ ১১৭; অনুবাদ লেখকের)
এখন বুখারী শরীফ থেকে কিছু হাদীস:
১. আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুসলিম (র) ... উম্মে হানি বিনত আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে তাঁকে গোসল-রত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা (রা) তাঁকে পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন: ইনি কে? আমি বললাম: আমি উম্মে হানি। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.২৭৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
২. ইসমা'ঈল ইবন্‌ আবু উওয়ায়স (রঃ)…উম্মে হানি বিন্‌ত আবু তালিব (রাঃ) বলেন: আমি বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রেখেছে। তিনি বলেন: আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ কে? আমি উত্তর দিলাম: আমি উম্মে হানি বিনত আবু তালিব। তিনি বললেন: মারহাবা, হে উম্মে হানি! গোসল করার পর তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক'আত সালাত আদায় করলেন। সালাত আদায় শেষ করলে তাঁকে আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ। আমার সহদর ভাই [আলী ইব্‌ন আবূ তালিব (রাঃ)] এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন: হে উম্মে হানি! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানি (রাঃ) বলেন: তখন ছিল চাশতের সময়। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.৩৫০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
৩. হাফ্‌স ইব্‌ন উমর (র.)……ইব্‌ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, উম্মে হানি (রা.) ব্যতীত অন্য কেউ নবী করীম (স.) কে সালাতুয্ যুহা (পূর্বাহ্ন এর সালাত) আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাদের জানাননি। তিনি (উম্মে হানি) (রা.) বলেন নবী (স.) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাকা'আত সালাত আদায় করেছেন। আমি তাঁকে এর চাইতে সংক্ষিপ্ত কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি, তবে তিনি রুকু' ও সিজদা পুর্ণভাবে আদায় করেছিলেন। লায়স (র.) আমির (ইব্‌ন রাবীআ') (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (স.) কে রাতের বেলা সফরে বাহনের পিঠে বাহনের গতিমুখী হয়ে নফল সালাত আদায় করতে দেখেছেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১০৪০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
৪. আদম (র.)……আবদুর রহমান ইব্‌ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উম্মে হানি (র.) (নবী করীম (স.)-এর চাচাত বোন) ব্যতিত অন্য কেউ নবী করীম কে চাশ্‌তের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেননি। তিনি উম্মে হানি (র.) অবশ্য বলেছেন, নবী করীম (স.) মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাঁকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখিনি। তবে কিরআত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু' ও সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছিলেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১১০৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
এই ধরনের আরও কিছু হাদিস রয়েছে বুখারী শরীফে।

দেখা যাক মুসলিম শরীফের কিছু হাদিস:
১. উম হানি বিন্‌ত আবু তালিব বর্ণনা করলেন: সেই দিনটি ছিল মক্কা বিজয়ের দিন। উনি (উম হানি) আল্লাহর রসূলের (সঃ) নিকট গেলেন। তখন তিনি (রসূল) নগরের এক উঁচু অংশে অবস্থান করছিলেন। আল্লাহর রসূল গোসল করতে উঠলেন। ফাতেমা একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে ঘিরে রাখলেন। তারপর তিনি নিজের কাপড় নিলেন এবং নিজেকে আবৃত করে ফেললেন। এরপর নবী আট রাকাতের পূর্বাহ্ণের নামায পড়লেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ০৬৬৪; অনুবাদ লেখকের)
২. আবু তালিব তনয়া উম হানির মুক্ত ক্রীতদাস আবু মুরা বলেছেন। উম হানি বললেন: যেদিন মক্কা দখল হয় সেদিন আমি আল্লাহর রসূলের (সঃ) কাছে গেলাম। আমি দেখলাম তিনি গোসল করছেন আর ফাতেমা তাঁকে এক কাপড়ের সাহায্যে পর্দা দিচ্ছেন। আমি সালাম জানালাম। উনি বললেন: এ কে? আমি জবাব দিলাম: আমি উম হানি, আবু তালিবের কন্যা। গোসল শেষ হলে তিনি নিজেকে এক টুকরো কাপড়ে জড়িয়ে নিলেন এবং আট রাকাত নামায আদায় করলেন। নামায শেষ হলে তিনি পেছনে তাকালেন। আমি বললাম: আল্লাহর রসূল, আমার মায়ের পুত্র আলী বিন আবু তালিব ফুলান বিন হুবায়রাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এদিকে আমি ফুলানকে আশ্রয় দিয়েছি। এই কথা শুনে আল্লাহর রসূল বললেন: ও উম হানি, আমরাও তাকে রক্ষা করব, যাকে তুমি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছ। উম হানি বললেন তখন ছিল পূর্বাহ্ণ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৫; অনুবাদ লেখকের)
এই হাদিসগুলো খুবই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। মুহাম্মদ সেদিন কয়বার ভোরের নামায পড়লেন? মনে হবে একবারই। কিন্তু এখানে দেখতে হবে যে, ফজরের পরের নামায হচ্ছে যুহা বা দুহার নামায, যা সাধারণত দুপুরের নামায। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফজর এবং যুহার নামাযের মাঝে অন্য নামায বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু মুহাম্মদ তার ব্যতিক্রম করলেন। তিনি সূর্য ওঠার আগে নিজের তাঁবুতে ফজরের নামায পড়লেন। উম হানির সাথে আশ্বাসের কিছু কথাবার্তা করলেন। তারপর সূর্য উঠে গেলে উম হানির গৃহে গেলেন পরিস্থিতি অবলোকনের জন্য। এই সময়টাকে চাশতের সময় বলা হয়। এই সময়ের নামাজকে চাশতের বা পূর্বাহ্ণের নামায বলা হয়। চাশত কয়টার সময়, তার সদুত্তর আমি পাইনি। অনুমান করা যেতে পারে সময়টা মধ্যাহ্নের আগে - খুব সম্ভবত, সকাল আট থেকে দশটা হবে। ধরা যাক, সকাল নয়টা। এই সময় নবী উম হানির গৃহে আসলেন। আবার গোসল করলেন এবং আবার আট রাকাত নামায পড়লেন - কিন্তু খুব দ্রুতভাবে। এই ব্যাপারটা খোলাসা হয় এই হাদিসে:
আবদুল্লাহ বিন হারিস বিন নৌফল বর্ণনা করলেন: আমি এক ব্যাপারে অনেককেই জিজ্ঞাসা করছি। আল্লাহর রসূল কি পূর্বাহ্ণের নামায আদায় করেছেন? কিন্তু আবু তালিবের কন্যা উম হানি ছাড়া কেউই এ ব্যাপারে জানাতে পারেনি। উম হানি বললেন: মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল (স.) আমাদের গৃহে আসলেন। তখন সূর্য যথেষ্ট উঠে গেছে। এক টুকরা কাপড় দিয়ে তাঁর নিভৃতে গোসল করার ব্যবস্থা করা হল। তিনি গোসল করলেন এবং নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হলেন। আট রাকাত নামায পড়লেন। আমি ঠিক বলতে পারি না তাঁর রুকু এবং সিজদা কি একই সময়ের ছিল কি না। উম হানি আরও বললেন: এর আগে আমি তাঁকে আর কখনো এই নফল (ঐচ্ছিক) নামায পড়তে দেখিনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৪; অনুবাদ লেখকের)
ওপরের হাদীসে বোঝা গেল, নবী একবারই চাশতের নামায পড়েছিলেন এবং তা করেছিলেন উম হানির গৃহে। একমাত্র উম হানির জন্যই মুহাম্মদ তাঁর নামাযের ব্যতিক্রম করলেন; একমাত্র উম হানির জন্যই নবী মুহাম্মদ প্রত্যূষে দু’বার গোসল করলেন। উম হানিই করলেন নবীর গোসলের ব্যবস্থা।

আমরা আগেই দেখেছি, উম হানি মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেননি। তাঁর স্বামীও উম হানির সাথে থাকতেন না। তবে উম হানি তাঁর দুই দেবর বা ঐ ধরনের দুই আত্মীয়কে আশ্রয় দিচ্ছিলেন। অনুমান করা যায়, যখন নবী উম হানির গৃহে আসলেন তখন উম হানি ইসলাম গ্রহণ করলেন।

সব শেষে আল ওয়াকেদীর কিতাব আল মাঘহাযি বই থেকে (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৪০৮-৪০৯):
মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানির দুই দেবর তাঁর গৃহে আশ্রয় নেন। সেই সময় উম হানির স্বামী গৃহে ছিলেন না।
তারা বলল: উম হানি বিন আবু তালিব বিবাহ করেন হুবায়রা বিন আবি ওহব আল মাখযুমিকে। মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানির দুই দেবর আবদুল্লাহ বিন আবি রাবিইয়া আল মাখযুমি এবং আল হারিস বিন হিশাম উম হানির কাছে এসে নিরাপত্তা চাইল। তারা বলল: "আমরা কি আপনার কাছে নিরাপদ থাকব?" উম হানি উত্তর দিলেন; "হাঁ, আপনারা আমার নিকট নিরাপদেই থাকবেন।" উম হানি আরও বললেন: "তারা দুজন আমার কাছেই ছিল, এমন সময় আমি দেখলাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত আলী ধীরে ঘোড়ায় চড়ে আমার গৃহে ঢুকলেন। বর্মে ঢাকা থাকার জন্য আমি আলীকে চিনতে পারি নাই। আমি বললাম; "আমি হচ্ছি নবীর চাচার কন্যা।" তারপর আলী তাঁর মুখ দেখালেন। আমি তখন তাঁকে দেখে বলে উঠলাম: "এ যে আলী, আমার ভাই!" আমি আলীকে অভ্যর্থনা জানালাম এবং আলিঙ্গন করলাম। কিন্তু আলী ঐ দুই ব্যক্তির দিকে তাকালেন আর তরবারি উঁচিয়ে নিলেন। আমি বলে উঠলাম: "এরা আমার নিজের লোক। তুমি এদের প্রতি নির্দয় হবে না।" তারপর আমি ঐ দু'জনের দিকে একটা জামা ছুড়ে দিলাম। তখন আলী বললেন: "তুমি কি অবিশ্বাসীদের আশ্রয় দিয়েছ?" এর পর আমি আলী ও তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম: "আল্লাহর কসম, তুমি যদি এদেরকে হত্যা করতে চাও তবে আমাকে দিয়ে শুরু কর।" উম হানি বললেন: "তখন আলী বাইরে চলে গেলেন, আর আমি তৎক্ষণাৎ গৃহে তালা লাগিয়ে দিলাম আর ওদেরকে বললাম: "তোমরা ভীত হবে না।"'
জীবন বাঁচাবার জন্য উম হানির স্বামী হুবায়রা পালিয়ে গেলেন নাজরানে এবং সেখানেই থেকে গেলেন। উম হানি ইসলাম গ্রহণ করলেন। মক্কা বিজয়ের পর হুবায়রা যখন এই সংবাদ জানলেন, তখন বললেন: (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৪১৭) [এখানে আল ওয়াকেদী হুবায়রার লেখা এক দীর্ঘ কবিতা দিয়েছেন - যা ইবনে ইসহাক এবং তাবারির উদ্ধৃত কবিতার মতই।]

আল ওয়াকেদী লিখেছেন, হুবায়রার সাথে তাঁর এক সঙ্গীও নাজরানে চলে যায়। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই সে মক্কায় ফিরে আসে এবং ইসলাম গ্রহণ করে। হুবায়রা অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিলেন ঐ সঙ্গীকে মক্কায় না ফিরে যাবার জন্য এবং পৈতৃক ধর্ম পরিত্যাগ না করার জন্য। কিন্তু হুবায়রার সঙ্গী তাঁর সাথে প্রতারণা করে।

অনুমান করা যায়, মনের দুঃখে হুবায়রা উম হানির স্মৃতিচারণ করে বেশ কিছু কবিতা রচনা করেছিলেন। এর পর কিছু সময়ের ব্যবধানে, নিতান্ত একাকীত্বের মাঝে হুবায়রা মারা যান। উম হানি হয়ে যান বিধবা।

মনে রাখা দরকার, হুবায়রার স্বামী কোনোদিনই তাঁর স্ত্রী উম হানিকে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ দেননি।

নবী বিজয়ী হলেন, সমগ্র আরব জাতীকে ইসলামের পদানত করলেন। উম হানি ইসলাম গ্রহণ করলেন, নবীর বশ্যতা স্বীকার করে নিলেন। কিন্তু নবী পারলেন না উম হানিকে তাঁর স্ত্রী বানিয়ে হারেমে তুলে নিতে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন