আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা - তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকা (পর্ব ২৫)


গত পর্বে বলা হয়েছিলো মক্কার ১৩ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে কুরাইশদের ভেতর থেকে কখনও মুসলিম না হওয়া 'ঘরের শত্রু বিভীষণ' ধাঁচের একাধিক চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা মুহাম্মদ এবং হাশিম গোত্রের বয়কটকালীন সময়সহ আজীবন মুহাম্মদকে সমর্থন-সাহায্য-সহযোগিতা করে গেছেন। মুহাম্মদের টিকে থাকার পেছনে এদের মানবিক ভূমিকা মক্কার কুরাইশদের মহত্ব প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট! তাদের সংখ্যা আপনার হাতের আঙ্গুলের জোড়া থেকে বেশি অবশ্যই, তবে আজ কয়েকজনের কথা বলাই যথেষ্ট মনে করছি।
১. মুতাইম ইবনে আদী
২. হিশাম ইবনে আমর
৩. যুহাইর ইবনে আবি উমাইয়া
৪. উৎবা ইবনে রাবীয়া
৫.আবদুল্লা ইবনে উরাইক্বিত্ব

এদের কারণে হাশিম গোত্র এবং মুহাম্মদের বয়কটকালীন টিকে থাকা সহজ হয়েছে; মুহাম্মদকে জীবিত রাখতে মুতাইম ইবনে আদী নিজ গোত্রের সকল শক্তি ব্যয় করেছেন, খাদ্য সরবরাহ করেছেন, বয়কট চুক্তি বাতিল করেছেন, নিজ সন্তান দিয়ে নিরাপত্তা দিয়েছেন; এমনকি মক্কা থেকে মদিনায় পলায়নে সাহায্য করেছেন মুহাম্মদকে। সবার আলাদা আলাদা ভূমিকা থাকলেও অবিশ্বাস্য সত্য হচ্ছে, যাকে মুহাম্মদের সবচেয়ে বড় শত্রুদের মধ্যে একজন হিসাবে গণ্য করা হয়, সেই মুহাম্মদের চাচা আব্দুল উজ্জা / আবু লাহাব-ও মুহাম্মদের টিকে থাকার পেছনে সবচেয়ে বড় বিভীষণ ছিলেন কুরাইশদের! যদিও সে ঘটনা আজ না বলে কিছুটা ধাঁধাঁ রেখে দেওয়া যেতেই পারে!


মুহাম্মদ বয়কটের সময়ে নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধি করেন, এবং তিনি যে একজন মানুষ, সেটা মেনে নেন; মুজেজা বা অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশ করার অক্ষমতাও মেনে নেন, সেই সাথে কোরআনের আয়াত পরিবর্তন ও মুজেজা প্রকাশের বিষয়টি যে কেবল আল্লাহর জন্য, তা প্রকাশিত আয়াতে ঘুরেফিরে আসতে থাকে; তবে তা ১০২ তম প্রকাশের চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি কুরাইশদের কাছে প্রমাণ করতে না পরার পর থেকে। ১০৩ তম প্রকাশ থেকে আগামী কয়েক পর্ব পর্যন্ত মুহাম্মদের এই দ্বিধার কাল চলতে থাকবে। কখনও তিনি ক্ষমতাবান আল্লার নবী, কখনও তিনি কেবল নগন্য বার্তাবাহী মানুষ!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৫ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ৩য় চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজী অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

মুহাম্মদ দ্বারা ১০২ তম প্রকাশ: সূরা আল কামার (৫৪) (চন্দ্র); ১ থেকে ৫৫ আয়াত:

১. সময় নিকটবর্তী এবং চন্দ্র অর্ধেক/আংশিক হয়েছে,

২. আর তারা কোনো নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে: এটা তো প্রচলিত যাদু।

৩. তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজ খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে, আর প্রত্যেক ব্যাপারই যথাসময়ে লক্ষ্যে পৌঁছবে।

৪. তাদের কাছে এমন সংবাদ এসে গেছে, যাতে সাবধানবাণী রয়েছে।

৫. তা (হল) সুদূর প্রসারী জ্ঞান, কিন্তু সেই সতর্কবাণী কোনো কাজে আসেনি।

৬. অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর। যেদিন আহবানকারী আহবান করবে এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে।

৭. ভীত-শংকিত চোখে তারা তাদের কবর থেকে বের হয়ে আসবে - যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল।

৮. তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে ভীত-বিহবল হয়ে। কাফিরেরা বলবে: কঠিন এই দিন।

৯. এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও মিথ্যা আরোপ করেছিল আমার বান্দার প্রতি এবং বলেছিল: এ তো এক পাগল। আর তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল।

১০. তখন সে তার প্রতিপালককে ডেকেছিল- ‘‘আমি পরাস্ত হয়েছি, কাজেই তুমি এর প্রতিবিধান কর।”

১১. ফলে আমি উন্মুক্ত করে দিলাম আকাশের দ্বার, প্রবল বারি বর্ষণে।

১২. এবং মাটি হতে উৎসারিত করলাম প্রস্রবণ। অতঃপর সকল পানি মিলিত হল এক পরিকল্পনা অনুসারে।

১৩. তখন নূহকে আরোহণ করালাম কাষ্ঠ ও কীলক নির্মিত এক নৌযানে,

১৪. যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। এটা পুরস্কার তার জন্য যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

১৫. আমি এটাকে রেখে দিয়েছি এক নিদর্শনরূপে; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি?

১৬. কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী!

১৭. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?

১৮. ‘আদ জাতি সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল, ফলে কত ভয়ংকর ছিল আমার ‘আযাব ও ভীতি প্রদর্শন।

১৯. আমি তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু এক অবিরাম অশুভ দিনে,

২০. মানুষকে তা উৎপাটিত করেছিল যেন তারা উৎপাটিত খেজুর গাছের কাণ্ড।

২১. ঈ কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণী!

২২. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?

২৩. সামূদ জাতিও ভয়প্রদর্শনকারীদেরকে অস্বীকার করেছিল,

২৪. তারা বলেছিল: আমরা কি আমাদেরই সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির অনুসরণ করব? তাহলে তো আমরা বিপথগামী এবং উন্মাদরূপে গন্য হব।

২৫. আমাদের মধ্যে কি তারই প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে? না, সেতো একজন মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।

২৬. আগামীকাল তারা জানবে, কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।

২৭. আমি তাদের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি এক উষ্ট্রী; অতএব তুমি তাদের আচরণ লক্ষ্য কর এবং ধৈর্যশীল হও,

২৮. আর তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে পানি বন্টন নির্ধারিত এবং পানির অংশের জন্য প্রত্যেকে হাযির হবে পালাক্রমে।

২৯. শেষে তারা তাদের এক সঙ্গীকে ডাকল আর সে তাকে (অর্থাৎ উষ্ট্রীটিকে) ধরে হত্যা করল।

৩০. কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণী!

৩১. আমি তাদের ওপর পাঠিয়েছিলাম একটি মাত্র প্রচণ্ড ধ্বনি। ফলে তারা খোঁয়াড়ওয়ালাদের (নির্মিত) ভেঙ্গে চুরে যাওয়া শুকনা ডালপালার মত গুঁড়িয়ে গেল।

৩২. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?

৩৩. লূতের জাতি সতর্কবাণী প্রত্যাখ্যান করেছিল,

৩৪. আমি তাদের ওপর প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বহনকারী প্রচণ্ড ঝটিকা, কিন্তু লূত পরিবারের ওপর নয়; তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম রাতের শেষাংশে,

৩৫. আমার বিশেষ অনুগ্রহ স্বরূপ; যারা কৃতজ্ঞ আমি এভাবেই তাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।

৩৬. লূত তাদেরকে সতর্ক করেছিল আমার কঠিন শাস্তি সম্পর্কে। কিন্তু তারা সতর্ক বাণী সম্বন্ধে বিতণ্ডা শুরু করল।

৩৭. তারা লূতের নিকট হতে তার মেহমানদেরকে দাবী করল, তখন আমি তাদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং বললাম: আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম।

৩৮. অতি সকালে নির্ধারিত শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।

৩৯. তখন আমি বললাম, ‘আমার শাস্তি ও সতর্কবাণীর স্বাদ গ্রহণ কর।

৪০. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?

৪১. ফেরাউন গোষ্ঠীর কাছেও (আমার) সতর্কবাণী এসেছিল।

৪২. তারা আমার সকল নিদর্শনকে অস্বীকার করেছিল, তখন আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমতাবানের পাকড়াওয়ে।

৪৩. তোমাদের (মক্কাবাসী) কাফিররা কি এ লোকেদের চেয়ে ভাল? নাকি (আসমানী) গ্রন্থাদিতে তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা লেখা আছে?

৪৪. নাকি তারা বলে- ‘আমরা সংঘবদ্ধ দল, নিজেদের প্রতিরক্ষায় সক্ষম।

৪৫. এ সংঘবদ্ধ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে আর পেছন ফিরে পালাবে।

৪৬. অধিকন্তু কিয়ামাত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামাত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর।

৪৭. নিশ্চয়ই অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত।

৪৮. যেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে সেই দিন বলা হবে: জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন কর।

৪৯. আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। 

৫০. আমার আদেশ তো একটি কথায় নিস্পন্ন, চোখের পলকের মত।

৫১. আমি ধ্বংস করেছি তোমাদের মত দলগুলিকে; অতএব উহা হতে উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি?

৫২. তারা যা কিছু করেছে তা আছে ‘আমালনামায়,

৫৩. ছোট আর বড় সবই আছে লিপিবদ্ধ।

৫৪. খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে,

৫৫. প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদার স্থানে, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী (আল্লাহ)’র নিকটে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৩ তম প্রকাশ: সূরা আল যিলযাল (৯৯) (ভূমিকম্প); ১ থেকে ৮ আয়াত:

১. যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে,

২. যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।

৩. এবং মানুষ বলবে: এর কী হল?

৪. সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।

৫. কারণ তোমার প্রতিপালক তাকে আদেশ করবেন,

৬. সেদিন মানুষ বের হবে ভিন্ন ভিন্ন দলে যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো যায়,

৭. অতএব কেউ অণু পরিমাণও সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে,

৮. আর কেউ অণু পরিমাণও অসৎ কাজ করলে সেও তা দেখবে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৪ তম প্রকাশ: সূরা আস সেজদাহ্ (৩২) (সিজদা), ১-১৫ এবং ২১ থেকে ৩০ আয়াত:

১. আলিফ লাম মীম।

২. এ কিতাব বিশ্বজগতের পালনকর্তার নিকট হতে অবতীর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

৩. তবে তারা কি বলে যে, সে নিজেই তা রচনা করেছে (এবং আল্লাহর নিকট থেকে আগত কিতাব বলে মিথ্যে দাবি করছে, না তা নয়), বরং তা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে (আগত) সত্য যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সকর্তকারী আসেনি, সম্ভবত, তারা সঠিকপথ প্রাপ্ত হবে।

৪. আল্লাহ, তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সাহায্যকারীও নেই, তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?

৫. তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর একদিন সব কিছুই তাঁর সমীপে সমুত্থিত হবে, যে দিনের পরিমাপ হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছরের সমান।

৬. এমনই তিনি, অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সম্পর্কে জ্ঞাত, মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

৭. যিনি তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম রূপে এবং কাদা মাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

৮. অতঃপর তার বংশ উৎপন্ন করেছেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে।

৯. পরে তিনি ওকে করেছেন সুষম এবং ওতে ফুঁকে দিয়েছেন রুহ্ তাঁর নিকট হতে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ; তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।

১০. তারা বলে: আমরা মাটিতে পর্যবসিত হলেও কি আমাদেরকে আবার নতুন করে সৃষ্টি করা হবে? বস্তুতঃ তারা তাদের রবের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করে।

১১. বল, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে, অতঃপর তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।

১২. তুমি যদি দেখতে যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে (আর বলবে), হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম; কাজেই আমাদেরকে আবার পাঠিয়ে দিন, আমরা ভাল কাজ করব, আমরা (এখন) দৃঢ় বিশ্বাসী।

১৩. আমি যদি ইচ্ছে করতাম তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎ পথে পরিচালিত করতাম। কিন্তু আমার (এ) কথা অবশ্যই সত্য প্রতিপন্ন হবে: আমি নিশ্চয়ই জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ মিলিয়ে পূর্ণ করব।

১৪. কাজেই (শাস্তির) স্বাদ গ্রহণ কর, কেননা এ দিনের সাক্ষাৎকে তোমরা ভুলে গিয়েছিলে, আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেছি। তোমরা চিরস্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করতে থাক, তোমরা যা করছিলে তার কারণে।

১৫. আমার নিদর্শনাবলীতে কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যাদেরকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আর তারা অহংকার করে না।

২১. গুরুতর শাস্তির আগে আমি তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা (অনুশোচনা নিয়ে) ফিরে আসে।

২২. তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দান করা হলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।

২৩. আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, কাজেই তুমি তার (অর্থাৎ আল কুরআনের) প্রাপ্তিতে সন্দেহে পতিত হয়ো না। আমি ওটাকে বানী ইসরাঈলের জন্য পথপ্রদর্শক করেছিলাম।

২৪. আর আমি তাদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম যারা আমার নির্দেশ মুতাবেক সৎপথ প্রদর্শন করত যতদিন তারা ধৈর্য অবলম্বন করেছিল আর আমার আয়াতসমূহের উপর দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল।

২৫. তোমার প্রতিপালক, তিনি কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত।

২৬. এটাও কি তাদেরকে সত্য পথ দেখায় না যে, আমি তাদের পূর্বে কত মানব বংশ ধ্বংস করেছি যাদের বাসভূমির ওপর দিয়ে তারা (এখন) চলাফেরা করে? এতে অবশ্যই (আল্লাহর) নিদর্শন আছে, তবুও কি তারা শুনবে না?

২৭. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমির পানি প্রবাহিত করে ওর সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা হতে আহার্য গ্রহণ করে তাদের গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তুগুলি এবং তারা নিজেরাও? তাদের কি দৃষ্টিশক্তি নেই?

২৮. তারা জিজ্ঞেস করে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে বল, কখন হবে এই ফাইসালা?

২৯. বল: ফাইসালার দিন কাফিরদের ঈমান আনা তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবেনা।

৩০. অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর এবং অপেক্ষা কর; তারাও অপেক্ষা করছে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৫ তম প্রকাশ: সূরা বনী-ইসরাঈল (১৭) (ইহুদী জাতি), (২৬, ৩২, ৩৩, ৫৭, ৭৩ থেকে ৮০বাদে) ৯ থেকে ১১১ আয়াত:

৯. এই কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ পথ নির্দেশ করে এবং সৎ কর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।

১০. আর যারা পরকাল বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি মর্মন্তুদ শাস্তি।

১১. মানুষ যেভাবে কল্যাণ কামনা করে, সেভাবেই অকল্যাণ কামনা করে। মানুষ তো অতি ত্বরাপ্রবণ।

১২. আমি রাত আর দিনকে দুটো নিদর্শন বানিয়েছি। আমি রাতের নিদর্শনটিকে জ্যোতিহীন করেছি, আর দিনের নিদর্শনটিকে করেছি আলোয় উজ্জ্বল যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার আর যাতে বছরের সংখ্যা আর হিসাব জানতে পার; আমি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছি।

১৩. প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামাত দিবসে আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত।

১৪. (আমি বলব) তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর; আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিকাশের জন্য যথেষ্ট।

১৫. যারা সৎ পথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য তা অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারাতো পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং কেহ অন্য কারও ভার বহন করবে না; আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কেহকেও শাস্তি দিই না

১৬. যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন ওর সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎ কাজ করতে আদেশ করি, কিন্তু তারা সেখানে অসৎ কাজ করে। অতঃপর ওর প্রতি দণ্ডাজ্ঞা ন্যায় সঙ্গত হয়ে যায় এবং আমি ওটাকে সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত করি।

১৭. নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করেছি। তোমার প্রতিপালকই তাঁর দাসদের পাপাচারণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।

১৮. কেহ পার্থিব সুখ সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি, যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত অবস্থায়।

১৯. যারা বিশ্বাসী হয়ে পরকাল কামনা করে এবং ওর জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টাসমূহ আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে।

২০. তোমার প্রতিপালকের দান থেকে আমি এদেরকে আর ওদেরকে সকলকেই সাহায্য করে থাকি, তোমার প্রতিপালকের দান তো বন্ধ হওয়ার নয়।

২১. লক্ষ্য কর, আমি কীভাবে তাদের এক দলকে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ ও শ্রেয়ত্বে শ্রেষ্ঠতর।

২২. আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য সাব্যস্ত করো না, করলে তিরস্কৃত হতভাগ্য হয়ে পড়ে থাকবে।

২৩. তোমার প্রতিপালক হুকুম জারি করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত করো না, আর পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন বা তাদের উভয়ে যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে বিরক্তি বা অবজ্ঞাসূচক কথা বলো না, আর তাদেরকে ভৎর্সনা করো না। তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল।

২৪. তাদের জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেমনভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন।’

২৫. তোমাদের প্রতিপালক খুব ভাল করেই জানেন তোমাদের অন্তরে কী আছে। তোমরা যদি সৎকর্মশীল হও, তবে যারা বার বার তাঁর দিকে ফিরে আসে, তিনি তো তাদের প্রতি পরম ক্ষমাশীল।

২৭. অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তো তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।

২৮. এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল।

২৯. তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।

৩০. নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত, সব কিছু দেখছেন।

৩১. দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ।

৩৪. পিতৃহীন বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ছাড়া তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না এবং প্রতিশ্রুতি পালন কর; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।

৩৫. মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম ও পরিণামে উৎকৃষ্ট।

৩৬. যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় - ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।

৩৭. ভূপৃষ্ঠে দম্ভ ভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনই পদভরে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না।

৩৮. এগুলোর মধ্যে যে সমস্ত বিষয় মন্দ, তোমার প্রতিপালকের নিকট তা ঘৃণিত।

৩৯. এসব সেই হিকমাতের অন্তর্ভুক্ত যা তোমার প্রতিপালক তোমার প্রতি ওয়াহী করেছেন। আল্লাহর সঙ্গে অপর কোনো উপাস্য স্থির করো না, করলে তুমি নিন্দিত ও যাবতীয় কল্যাণ বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

৪০. তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদের জন্য পুত্রসন্তান নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি নিজে (ফেরেশতাদের) কন্যা রূপে গ্রহণ করেছেন? তোমরা তো নিশ্চয়ই ভয়ানক কথা বলে থাক।

৪১. এই কুরআনে বহু নীতিবাক্য আমি বারবার বিবৃত করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তাতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।

৪২. বল - তাঁর সঙ্গে যদি আরো ইলাহ থাকত যেমন তারা বলে, তাহলে তারা অবশ্যই আরশের মালিকের নিকট পৌঁছার জন্য পথের সন্ধান করত।

৪৩. তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত এবং তারা যা বলে তা হতে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।

৪৪. সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অর্ন্তবর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পারনা; তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

৪৫. তুমি যখন কুরআন পাঠ কর তখন তোমার ও যারা পরলোকে বিশ্বাস করে না, তাদের মধ্যে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা টেনে দিই।

৪৬. আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা উপলদ্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি। তোমার রাব্ব এক, এটা যখন তুমি কুরআন হতে আবৃত্তি কর তখন তারা সরে পড়ে।

৪৭. যখন তারা কান পেতে তোমার কথা শোনে, তখন তারা কেন তা শোনে আমি তা ভাল জানি, এবং এটাও জানি যে, গোপনে আলোচনা কালে সীমা লংঘনকারীরা বলে: তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করছ।

৪৮. দেখ, তারা তোমার কী উপমা দেয়! তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তারা সৎ পথ খুঁজে পাবে না।

৪৯. তারা বলে: আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টি রূপে পুনরুত্থিত হব?

৫০. বল, ‘তোমরা যদি পাথর কিংবা লোহাও হয়ে যাও,

৫১. অথবা এমন কিছু যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন। তারা বলবে: কে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবে? বল: তিনিই যিনি তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তারা তোমার সামনে মাথা নাড়াবে এবং বলবে: ওটা কবে হবে? বল: হবে, সম্ভবত, শীঘ্রই

৫২. যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন এবং তোমরা প্রশংসার সাথে তাঁর আহবানে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে।

৫৩. আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বল; শাইতান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়; শাইতান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।

৫৪. তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে খুব ভাল করেই জানেন। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন, আর ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন; আমি তোমাকে (হে নাবী!) তাদের কাজকর্মের জন্য দায়িত্বশীল করে পাঠাইনি।

৫৫. যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আছে তাদেরকে তোমার প্রতিপালক ভালভাবে জানেন; আমি তো নাবীদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছি; দাউদকে আমি যাবুর দিয়েছি।

৫৬. বল: তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে উপাস্য মনে কর তাদেরকে আহবান কর; করলে দেখবে তোমাদের দুঃখ দৈন্য দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই।

৫৮. এমন কোনো জনপদ নেই যা আমি কিয়ামাত দিনের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা কঠোর শাস্তি দিব না; এটা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।

৫৯. পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করার কারণেই আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা হতে বিরত রাখে; আমি স্পষ্ট নিদর্শন স্বরূপ সামূদের নিকট উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর তারা ওর প্রতি যুলম করেছিল; আমি ভয় প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শন প্রেরণ করি।

৬০. স্মরণ কর, আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমার পালনকর্তা মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন; আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি কিংবা কুরআনে উল্লিখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ শুধু মানুষের পরীক্ষার জন্য আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করি। কিন্তু এটা তাদের তীব্র অবাধ্যতাই বৃদ্ধি করে।

৬১. স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম: আদমের প্রতি সাজদাহবনত হও; তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সাজদাহবনত হল; সে বলল: আমি কি তাকে সাজদাহ করব যাকে আপনি মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন?

৬২. সে আরও বলল: লক্ষ্য করুন, তাকে যে আপনি আমার ওপর মর্যাদা দান করলেন, কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে বিনষ্ট করব।

৬৩. (আল্লাহ) বললেন: যা, জাহান্নামই তোর এবং তাদের সম্যক শাস্তি যারা তোর অনুসরণ করবে।

৬৪. তোর আহবানে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস সত্যচূত কর, তোর অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যা, এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। শাইতান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র।

৬৫. নিশ্চয়ই আমার দাসদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই; কর্ম বিধায়ক হিসাবে তোর প্রতিপালকই যথেষ্ট।

৬৬. তোমাদের (প্রকৃত) প্রতিপালক তো তিনিই, যিনি সমুদ্রে তোমাদের জন্য সুস্থিরভাবে নৌযান পরিচালনা করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার, তিনি তোমাদের প্রতি বড়ই দয়ালু।

৬৭. সমুদ্রে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন শুধু তিনি ছাড়া অপর যাদেরকে তোমরা আহবান কর তারা তোমাদের মন হতে উধাও হয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তোমাদেরকে উদ্ধার করেন তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও; বস্তুতঃ মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।

৬৮. তোমরা কি নিশ্চিত আছ যে, তিনি তোমাদেরকে স্থলে কোথাও ভূ-গর্ভস্থ করবেন না অথবা তোমাদের উপর কংকর বর্ষণ করবেন না? তখন তোমরা তোমাদের কোন কর্ম বিধায়ক পাবে না।

৬৯. অথবা তোমরা কি নিশ্চিন্ত আছ যে, তোমাদেরকে আর একবার সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঝটিকা পাঠাবেন না এবং তোমাদের সত্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না।

৭০. আমি তো আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; আর তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।

৭১. স্মরণ কর সেই দিনকে যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ আহবান করব; যাদেরকে ডান হাতে ‘আমলনামা দেয়া হবে তারা তাদের ‘আমলনামা পাঠ করবে (আনন্দের সাথে) এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলম করা হবে না।

৭২. যে ইহলোকে অন্ধ পরলোকেও সে অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।

৮১. বল, ‘সত্য এসে গেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই।’

৮২. আমি অবতীর্ণ করেছি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য সুচিকিৎসা ও দয়া, কিন্তু তা সীমা লংঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।

৮৩. যখন আমি মানুষের উপর অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও অহংকারে দূরে সরে যায় এবং তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।

৮৪. বল: প্রত্যেকে তার নিজ নিজ রীতি অনুসারে কাজ করে। কিন্তু তোমার পালনকর্তা ভাল করে জানেন, কে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল পথে আছে।

৮৫. তোমাকে তারা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বল: রূহ্ আমার রবের আদেশ ঘটিত; এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।

৮৬. ইচ্ছা করলে আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম; তাহলে তুমি এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন কর্মবিধায়ক পেতে না।

৮৭. এটা প্রত্যাহার না করা তোমার রবের দয়া; তোমার প্রতি আছে তাঁর মহা অনুগ্রহ।

৮৮. বল: যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন রচনা করার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন রচনা করতে পারবে না।

৮৯. আমি এই কুরআনে মানুষের জন্য বিভিন্ন উপমা দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী করা ছাড়া ক্ষান্ত হয় না।

৯০. আর তারা বলেঃ কখনই আমরা তোমাতে বিশ্বাস স্থাপন করব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য ভূমি হতে এক প্রস্রবণ উৎসারিত করবে।

৯১. অথবা তোমার খর্জুরের অথবা আঙ্গুরের এক বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি অজস্র ধারায় প্রবাহিত করে দেবে নদীনালা।

৯২. অথবা তুমি যেমন বলে থাক, তদনুযায়ী আকাশকে খণ্ড বিখণ্ড করে আমাদের ওপর ফেলবে, অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবে।

৯৩. অথবা তোমার একটি স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আকাশে আরোহণ আমরা তখনও বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ করবে যা আমরা পাঠ করব। বল: পবিত্র আমার মহান রাব্ব! আমি তো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল।

৯৪. ‘আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?’ - তাদের এই উক্তিই বিশ্বাস স্থাপন হতে লোকদেরকে বিরত রাখে, যখন তাদের নিকট আসে পথ নির্দেশ।

৯৫. বল, ‘দুনিয়াতে যদি ফেরেশতাগণের বসবাস হত যারা নিশ্চিন্তে নিরাপদে চলাফেরা করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের কাছে ফেরেশতা রসূল পাঠাতাম।’

৯৬. বল: আমার ও তোমাদের মধ্যে স্বাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি তাঁর দাসদেরকে সবিশেষ জানেন ও দেখেন।

৯৭. আল্লাহ যাদের পথ প্রদর্শন করেন তারাই তো সঠিক পথপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন তাদের জন্য তুমি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবে না। কিয়ামাতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, বোবা অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম! যখনই তা স্তিমিত হবে আমি তখন তাদের জন্য আগুন বৃদ্ধি করে দিব।

৯৮. এটাই তাদের প্রতিফল, কারণ তারা আমার নিদর্শন অস্বীকার করেছিল ও বলেছিল: আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টি রূপে পুনরুত্থিত হব?

৯৯. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ! যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি ওগুলির অনুরূপ সৃষ্টি করতে ক্ষমতাবান? তিনি তাদের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই; তথাপি সীমা লংঘনকারীরা প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া আর সবই অস্বীকার করে।

১০০. বল: যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভাণ্ডারের অধিকারী হতে তবুও ‘ব্যয় হয়ে যাবে’ এই আশংকায় তোমরা ওটা ধরে রাখতে, মানুষতো অতিশয় কৃপণ।

১০১. তুমি বানী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখ, আমি মূসাকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম; যখন সে তাদের নিকট এসেছিল তখন ফিরআউন তাকে বলেছিল: হে মূসা! আমি তো মনে করি তুমি যাদুগ্রস্ত।

১০২. মূসা বলেছিল: তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এই সমস্ত স্পষ্ট নিদর্শন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ। হে ফিরআউন! আমি তো দেখছি, তুমি ধ্বংস হয়ে গেছ।

১০৩. অতঃপর ফিরআউন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করার সংকল্প করল; তখন ফিরআউন ও তার সঙ্গীদের সকলকে আমি নিমজ্জিত করলাম।

১০৪. এরপর আমি বানী ইসরাঈলকে বললাম: তোমরা এই দেশে বসবাস কর এবং যখন কিয়ামাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্রিত করে উপস্থিত করব।

১০৫. আমি সত্য সত্যই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং তা সত্যসহই অবতীর্ণ হয়েছে; আমি তো তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি।

১০৬. আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে; এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি।

১০৭. বল: তোমরা বিশ্বাস কর অথবা না কর, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের সামনে যখন আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বিনয়ের সাথে কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে ।

১০৮. এবং বলে: আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান! আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে।

১০৯. এবং কাঁদতে কাঁদতে তাদের মুখমণ্ডল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এতে তাদের বিনয়ই বৃদ্ধি পায়।

১১০. বল: তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রাহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নামই তো তাঁর! তোমরা নামাজে তোমাদের স্বর উচু কর না এবং অতিশয় ক্ষীণও কর না; এই দুই এর মধ্য পন্থা অবলম্বন কর।

১১১. বল: প্রশংসা আল্লাহরই যিনি সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশী নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে; সুতরাং স্বসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: ‘চন্দ্র ‍দ্বিখণ্ডিত হওয়ার রহস্য উন্মোচন’ নামে বিশেষ পর্বে ১০২ তম প্রকাশের প্রথম দুই আয়াতের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে; প্রকাশের ধারাবাহিকতা হিসেব করলে এরপরের সবচেয়ে বড় মুজেজা/অলৌকিক বিষয় আসবে মুহাম্মদের মিরাজ/মেরাজ গমনের বিষয়ে। মজার বিষয় হচ্ছে মিরাজ/মেরাজ বিষয়টিকে ‘চন্দ্র ‍দ্বিখণ্ডিত হওয়ার রহস্য উন্মোচন’–এর চাইতেও সহজে যুক্তিযুক্তভাবে খণ্ডন করা যায়; সময় আসলে এবং পাঠকের আগ্রহ থাকলে সে চেষ্টায় আবারও মুহাম্মদের মনোজগতের হদিস নেয়া যেতে পারে।

তবে একটা কষ্ট থেকেই যাচ্ছে, ৩য় পর্বের ১৫ তম প্রকাশ নিয়ে মুহাম্মদের বক্ষ উন্মোচনের আসল রহস্য ফাঁস করার জন্য নতুন করে লেখা শুরু করতে হবে, কিন্তু তা হয়ত এ সিরিজটি শেষ হবার পর; অপেক্ষায় থাকুন।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন