লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টা, আসর নামাজের একটু আগের ঘটনা, বন্ধুদের সাথে বসে চা খাচ্ছিলাম। প্রায় ছুটির বিকেলেই বন্ধুরা মিলে চৌরাস্তার মোড়ে আড্ডায় বসি। মোড়ের কালাম চাচার দোকানের চা জগৎসেরা বলা চলে অনায়াসে। আমার বন্ধুদের ভেতর সকল পেশার জনগণ বিদ্যমান, তবে আজকের গল্প লিঙ্গমুণ্ডু-কাটা এক মুসলমান মুমিন নিয়ে!
কথা বলার ফাঁকে হাওয়া থেকে তাবলীগ জামাত-এর লোকজন এসে হাজির, তারপর যথারীতি শুরু হলো বয়ান: আপনারা তো সকলেই মুসলিম? উত্তর দিলাম, হ্যাঁ।
আমাদের কত সৌভাগ্য, আল্লাহ আমাদের মুসলমানের ঘরে জন্ম দিয়েছেন। আজ যদি আমরা মুসলমানের ঘরে জন্ম না নিয়ে কোনো বেদ্বীন-কাফেরের ঘরে জন্ম নিতাম, ভেবে দেখেন তো, মরনের পরে কোথায় ঠাঁই হতো আমাদের! যে আল্লাহ আমাদের মুসলিম হবার তৌফিক দান করেছেন, তার জন্য কি আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত নয়? উত্তর দিলাম, হ্যাঁ।
তা বাবারা চলেন আজকের আসরের নামাজটা একসাথে জামাতের সাথে মসজিদে পড়ি; আমরা মাগুরা জেলা থেকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে আপনাদের এলাকায় এসেছি; সকলে ওয়াদা করেন, আসরের নামাজটা আমাদের সাথে পড়বেন!
যারা এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন, কেবল তাদের পক্ষেই বোঝা সম্ভব, ঠিক কেমন লাগে তখন! তবে আমাদের ঘটনা এতটা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো যে, তার প্রমাণ দিতে মসজিদে গিয়ে আসর নামাজ পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিলো!
এলাকার চৌরাস্তা পেরিয়ে পশ্চিমের শেষ প্রান্তে শ্মশান ঘাট আছে একটা, প্রায় প্রতিদিনই লাশবাহী মানুষ আর হরে-কৃষ্ণ-হরে-কৃষ্ণ ও রাস্তায় খই ফেলতে ফেলতে হিন্দু শবযাত্রা চোখে পরে। প্রকৃতির লীলা বোঝা বড় দায়, তাবলীগ জামাতের বয়ান শুনতে শুনতেই একটি শবযাত্রা পার হলো সামনে দিয়ে। দোকানদার চাচাকে প্রশ্ন করলাম: চাচা, কে মারা গেলো, জানেন কিছু?
চাচার উত্তর: ওই যে স্কুল শিক্ষক রামলাল বাবু আছে না, তার বাবা! বেচারা খুব ভাল লোক ছিলেন, এত ভালো মানুষ আমি আমার জন্মে দেখিনি।
লিঙ্গমুণ্ডু-কাটা তাবলীগের এক মুসলমান মুমিন দোকানদার চাচার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন: এই তো চোখের সামনে দিয়ে প্রমাণ দেখছেন, মানুষটা এত ভালো হবার পরেও কেবল ঈমান না থাকার কারণে, ভাল কাজের কোনো মূল্য তিনি পাবেন না, চিতায় পুড়ে ছাই হবার পরও তাকে দোযখের আগুনে পুড়তে হবে অনন্তকাল!
মাথায় বিচি উঠে গেলো আমার; শালার লোক বলে কী? বলেই ফেললাম: তবে তো স্কুল শিক্ষক রামলাল কাকার বাবা আর নবী মুহাম্মদের পিতা একই দোযখের বাসিন্দা হবেন!
তাবলীগি মুমিনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো, অবাক হয়ে বলে উঠলেন: কিসের সাথে আপনি কী তুলনা করেন? এ কথা মানছি যে, নবী মুহাম্মদের আব্বাজান ইসলাম কবুল করতে পারেন নাই, কিন্তু তিনি তো সাধারণ কেউ নন!
আমি বলালাম: কার কথা মানবো, আপনার? না হাদিসের? সহিহ্ হাদিসে পরিষ্কার বলা আছে; নবী মুহাম্মদের আব্বা আবদুল্লা দোযখবাসী!
মুমিন বলে উঠলো: আপনি প্রমাণ দিতে পারবেন?
বললাম: অবশ্যই।
আসরের আজান দিয়ে দিলো! তাদের সাথে লম্বা লাইন ধরে যেতেই হলো মসজিদে! তার পরের ঘটনা বরাবরের মতই সংক্ষিপ্ত!
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
হাদিস নং:৪৬৪৩, হাদিসের মান: সহিহ্
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কোথায়? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা জাহান্নামে। যখন সে চলে যাচ্ছিল, তখন তিনি বলেনঃ আমার ও তোমার পিতা জাহান্নামে।
প্রিয় মুমিন পাঠক, আপনাদের নবীর পিতা, যিনি জন্ম না নিলে মুহাম্মদের জন্মই হতো না, এবং যার নিজ সন্তানকে দেখার সুযোগ পর্যন্ত হয়নি, সে কিনা যাবে জাহান্নামে! এ কেমন পুত্র আবদুল্লার! এ কেমন দয়ার নবী আপনাদের, যিনি তার জন্মের আগেই মৃত পিতাকে বেহেস্তে নেবার ক্ষমতা রাখেন না! আপনারা কী করে আশা করেন, তিনি আপনাদের বেহেস্তে নেবার জন্য সুপারিশ করবেন?
যদি এই হাদিসের বর্ণনা সত্য হয়, তবে রামলাল কাকার বাবা আর আপনাদের নবীর পিতার কতটুক পার্থক্য থাকে, ভেবে দেখেছেন কি?
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন