লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
পর্ব ১ > পর্ব ২
নীতি-দ্বৈতনীতি
প্রতিটি মানুষ সমান, ইসলামের এই নীতির প্রশংসা না করলে ছোট করা হবে মুহাম্মদের নীতিবোধের। তবে সমান হবার প্রথম শর্ত আপনাকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে!
বুখারী-১-২-১২: তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।
বুখারী-৯-৮৫-৮৩: এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, না সে তার প্রতি জুলুম করবে, না তাকে অন্যের হাওলা (দায়িত্বে দেওয়া) করবে। যে কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন।
বুখারী-৮-৭৩-৭০: মুহাম্মদ বলেছেন: মুসলমানকে গালি দেওয়া/ক্ষতি করা ফাসিকি (কবিরা গুনাহ) এবং একে অন্যেকে হত্যা করা কুফরী।
ইসলামে মিথ্যা সব সময়ই মিথ্যা নয়, এমনকি কসমও নয় চুড়ান্ত কসম!
বুখারী-৩-৪৯-৮৫৭: সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য (নিজের থেকে মিথ্যা বলে) ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।
বুখারী-৮-৭৮-৬১৮: আবু বকর কখনও কসম ভঙ্গ করেননি, যতক্ষণ না আল্লাহ্ তাআলা কসমের কাফফারা সংক্রান্ত আয়াত নাযিল করেন। তিনি বলতেন: আমি যেকোনো ব্যাপারে কসম করি, এরপর যদি এর চেয়ে উত্তমটি দেখতে পাই তবে উত্তমটিই করি এবং আমার কসম ভঙ্গের জন্য কাফফারা আদায় করে দেই।
মুহাম্মদ নিজে শিখিয়েছেন, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মিথ্যা কথা বলা অন্যায় নয় মোটেই। মুহাম্মদের জামাতা আলী'র ভিন্নমত হবার কারণ আছে কি?
বুখারী-৫-৫৯-৩৬৯: মুহাম্মদ বললেন: কাব ইবনে আশরাফের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত আছো কে? কেননা সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা দাঁড়ালেন, এবং বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি কি চান যে আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা বললেন, তাহলে আমাকে কিছু মিথ্যা কথা বলার অনুমতি দিন। মুহাম্মদ বললেন: হ্যাঁ বল।বুখারী-৯-৮৪-৬৪: আলী বলেছেন: আমি যখন তোমাদেরকে রাসুলুল্লাহ–এর কোন হাদীস বর্ণনা করি ‘আল্লাহর কসম’! তখন তাঁর উপর মিথ্যা কথা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে নিচে পড়ে যাওয়াটা আমার কাছে শ্রেয়। কিন্তু আমি যদি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলি, তাহলে মনে রাখাতে হবে যে, মিথ্যা শত্রুর বিরুদ্ধে একটি কৌশল।
মুসলিম-৩২-৬৩০৩: মুহাম্মদ বলেছেন: সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মাঝে আপোষ মীমাংসা করে দেয়। সে কল্যাণের জন্যই (মিথ্যা) বলে এবং কল্যাণের জন্যই চোগলখুরী (দুমুখো) করে। ইবনে শিহাব বলেন: তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত কোনো বিষয়ে রাসুলুল্লাহ মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছেন বলে আমি শুনিনি। যুদ্ধ ক্ষেত্রে, লোকদের মাঝে আপোষ-মীমাংসার জন্য, স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর কথা ও স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর কথা প্রসঙ্গে।
ইসলামে বিচারব্যবস্থা শরিয়া আইন-নির্ভর, শরিয়া মানুষের অন্যায়ের সমতাভিত্তিক বিচার করে বলে ধারণা করেন অনেকেই। তা হতে পারে অবশ্যই, যদি আপনি একজন (কাফির) অমুসলিমকে মানুষ মনে না করেন!
বুখারী-১-৩-১১৩: আবু জুহায়ফা বলেন: আমি আলী-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের কাছে কি লিখিত কিছু আছে? তিনি বললেন: না, কেবলমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে, আর সেই বুদ্ধি ও বিবেক, যা একজন মুসলিমকে দান করা হয়। এ ছাড়া যা কিছু এ পত্রটিতে লেখা আছে। আবু জুহায়ফা বলেন: আমি বললাম, এ পত্রটিতে কী আছে? তিনি বললেন: দিয়াতের (আর্থিক ক্ষতিপূরণ) ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, মুসলিমকে কাফিরের বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না।
মুহাম্মদ এতটাই নৈতিক মানুষ ছিলেন, মৃত্যুর পূর্বে তার অনুসারীদের দিয়ে গিয়েছিলেন সবচেয়ে বড় মানবিকতার পাঠ!
বুখারী-৪-৫২-২৮৮: মুহাম্মদ ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। (১) মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ (মক্কা, মদীনা, ইয়ামামা ও ইয়ামান) থেকে বিতাড়িত করো। (২) প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢৌকন দিয়েছি তোমরাও আনুরূপ দিও। (৩) (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গিয়েছি।
মুসলিম দাস-দাসী-গোলামের প্রতি তার মায়া ছিলো অসম্ভব, অথচ অমুসলিম নারী-শিশু নিয়ে তার দ্বৈতনীতি বিদ্যমান ছিলো আজীবন!
বুখারী-৩-৪৬-৬৯৩: মুহাম্মদ বলেছেন, কেউ কোনো মুসলিম গোলাম আযাদ (মুক্ত) করলে আল্লাহ সেই গোলামের প্রত্যেক অংগের বিনিময়ে তার এককটি অংগ (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্ত করবেন। সাঈদ ইবনে মারজানা বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবন হুসায়নের খিদমতে পেশ করলাম। তখন আলী ইবনে হুসায়ন তার এক গোলামের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে আবদুল্লাহ ইবনে জাফার তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দীনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে আযাদ করে দিলেন।
মুসলিম-১৯-৪৩২২: সাব ইবন জাছছামা থেকে বর্ণিত: আমি মুহাম্মদ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণে মুশরিকদের শিশুদের উপরও আঘাত করে ফেলি। মুহাম্মদ বললেনঃ, তারাও তাদের (মুশরিক যোদ্ধাদের) অন্তর্গত।
(চলবে)