লিখেছেন আক্কাস আলী
ঢাকায় খুব বোরিং লাগছিলো, তাই গত সপ্তাহে বেড়াতে গিয়েছিলাম কোপেনহেগেন, ডেনমার্কে। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা গিয়ে উঠলাম কোপেনহেগেন ম্যারিয়ট হোটেলে। পরদিন শহরটা ঘুরে দেখার জন্যে বের হলাম। হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেলো একটা পোস্টারে। “নিমো হুজুরের তদবীরে, মুশকিলে আহসান মিলে।” পোস্টারটা দেখেই দিলের মধ্যে কেমন একটা শান্তি অনুভব করলাম! আমি অনেকদিন ধরেই একজন ছহি পীরের সন্ধান করছিলাম, এইবার, বোধহয়, পেয়ে গেলাম। আমাদের দেশে তো চরমোনাই, ছারছিনা, দেওয়ানবাগী, শফি ইত্যাদি কত হুজুরই পীরব্যবসা করে যাচ্ছে। ছহি পীরের দেখা পাওয়া আর হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়া একই কথা। ভাবলাম, সময় করে নিমো হুজুরের দরবারে যাবো।
পরদিন সকালে একটা ট্যাক্সিক্যাবে করে সোজা গিয়ে পৌছলাম শহরের ফ্রেডারিক্সবার্গে হুজুরের দরবারে। অনেক মানুষের ভিড়, সবাই হয়তো তদবীর নেয়ার জন্যে এসেছে। ঢাকা থেকে এসেছি শুনেই আমাকে একটু আলাদাভাবে খাতির যত্ন করা হলো, আলহামদুলিল্লাহ। এরপর অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু হুজুরের দেখা নেই। অবশেষে একটু বিরক্ত হয়েই হুজুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর কাছে গেলাম।
- এখন কি হুজুরের সাথে দেখা করতে পারবো? উনি ভেতরে আছেন?
- আছে, তয় এহন যাইতে পারবেন না, একটা জটিল রোগীর তদবীর চলতেছে।
- জটিল রোগী? কী সমস্যা তার?
- সন্তান হয় না, বিবাহ হইছে ৫ বছর আগে। তয় আপনে ক্যান আইছেন হুজুরের কাছে? কী সমস্যা আপনের?
- আছে, গোপন সমস্যা।
- চিন্তা করিয়েন না, আমাগো হুজুর দিল দরিয়া। উনি কারও কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। উনার ধনটা ছোট হইলেও মনটা অনেক বড়।
- What?
- মানে হুজুরের ধনসম্পত্তি কম থাকলেও অনেক উদার মনের মানুষ।
এমন সময় হুজুরের রুম থেকে বোরখা পরিহিতা এক রোগী দ্রুত বের হয়ে গেলেন। অ্যাসিসট্যান্টের অনুমতি নিয়ে এবার আমি গেলাম হুজুরের রুমে। ঢুকেই কিছুটা বিব্রত হলাম, হুজুর অপ্রস্তুত ছিলেন, পাঞ্জাবির বোতাম লাগাচ্ছিলেন। এরপর চুল ঠিক করতে করতে তার তরমুজের বীচির মত দাঁতগুলো বের করে হাসিমুখে জানতে চাইলেন আমি কেন এসেছি। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছু। ভাবলাম, এই ভণ্ডের মুরিদ তো হবোই না, এখান থেকে কেটে পড়া দরকার। তাই মুরিদ হওয়ার কথা বলিনি। বললাম, "হুজুর, ডেনমার্কে এসে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছি। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।"
শুনেই হুজুর তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে ইশারা করলো। মিনিট পাঁচেক পর অ্যাসিসট্যান্ট এক মগ বিয়ার নিয়ে হাজির হলো! হায়রে কলিযুগ! আজকাল হুজুররাও বিয়ার খায়, খাওয়ায়! ওপরে ঘন ফেনা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না, ভাবলাম এটা বোধহয় ডেনমার্কের বিখ্যাত কার্লসবার্গ বিয়ার হবে। হাতে নিয়েই এক চুমুকে শেষ করে ফেললাম। একটু নোনতা, আর কেমন যেনো ভ্যাপসা একটা উৎকট গন্ধ, ফ্লেভারটা ঠিক পছন্দ হলো না। জানতে চাইলাম, "হুজুর, এটা কোন ব্র্যান্ডের বিয়ার?"
হুজুর হেসে বললেন, “আরে ধুর বলদ, মদ হারাম জিনিস। তোকে মদ খেতে দিবো কেন! এটা উটমূত্র। এইমাত্র সংগৃহীত। বোখারী শরীফে আছে, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পারলে আবহাওয়াজনিত অসুস্থতায় তাকে উটমূত্র খেতে দিতে হবে। [সহী বুখারি, খণ্ড ১, বই ৪, হাদিস ২৩৪] আমি সবসময় সুন্নতি চিকিৎসাই দিয়ে থাকি।
শুনেই আমার পেট মোচড় মেরে বমি হওয়ার উপক্রম। দৌড়ে বাইরে এসে পুলিশকে ফোন লাগালাম। পুলিশ এসে ঘটনা শুনে হুজুরকে ধরে জেলে নিয়ে গেল, কিছুতেই বুঝতে চাইলো না যে, ওটা ছিলো সুন্নতি চিকিৎসা। হুজুর এখন ৭ দিনের জেলে আছেন, সবাই হুজুরের জন্যে দোয়া করবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন