আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

সৌদি আরব কি ইসলামী সন্ত্রাসীদের পক্ষে না বিপক্ষে? - ৩

মূল: খালেদ ওলীদ
অনুবাদ: আবুল কাশেম

[ভূমিকা: ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে খালেদ ওলিদের ইসলাম পরিত্যাগের জবানবন্দির ও সৌদি নারীদের অবস্থা অনুবাদ করেছিলাম। তখন লিখেছিলাম, খালেদ আমাকে অনেক ই-মেইলে সৌদি আরাবের ইসলাম সম্পর্কে লিখেছিল। এখানে আমি তার আর একটি লেখা অনুবাদ করে দিলাম। উল্লেখযোগ্য যে, খালেদের এই লেখাটি একটা বইতে প্রকাশ হয়েছে। বইটার টাইটেল হলো: Why We Left Islam. - আবুল কাশেম, এপ্রিল ৪, ২০১০]


আমাদের বিদ্যালয়গুলিতে অংকের শিক্ষকেরা খুব স্বাভাবিকভাবেই জিহাদ নিয়ে আলোচনা করেন, এমনকি যে সব শিক্ষক বিজ্ঞান পড়ান, তাঁরাও জিহাদ নিয়ে মাতোয়ারা থাকেন। অনেক বিজ্ঞান শিক্ষক যখনই কাফেরদের কোনো নতুন আবিষ্কার সম্বন্ধে জানেন, তখনই নিশ্চিতের সাথে বলেন যে, কাফেরদের পূর্বেই ঐ সব আবিষ্কার অতীতে ইসলামের দ্বারা হয়েছিল। আমাদের ক্রীড়া শিক্ষকেরা ক্রীড়ার স্থলে আলোচনা করেন ইসলামী ক্রীড়ায় হারাম ও হালাল পোশাক সম্বন্ধে। উদাহরণত বলা যায় যে, শর্টস অথবা জার্সি—যাতে কোনো প্রতীক থাকবে, তা হারাম। আমার মনে আছে: একবার ছাত্র শিক্ষদের সাথে এক ফুটবল খেলার সময় আমাদের এক শিক্ষক শর্টস প্যান্ট পরে খেলতে নামলেন। এই জঘন্য ব্যাপার দেখে আমাদের প্রধান শিক্ষক ঐ শিক্ষককে আদেশ দিলেন অবিলম্বে কাফেরদের পোশাক পরিবর্তন করার জন্যে, না করলে ঐ শিক্ষকের চাকুরি খোয়া যাবে। প্রধান শিক্ষকের যুক্তি ছিল এই যে, শিক্ষককে হতে হবে ছাত্রদের জন্য উদাহরণ স্বরূপ। এতদ হয়রানির পরও ঐ শিক্ষক কাফেরদের পোশাক পরিবর্তন করতে অস্বীকৃতি জানালেন। ফলে তিনি চাকুরি থেকে বরখাস্ত হলেন। সেই শিক্ষকের বদলে ক্রীড়া শিক্ষক হিসাবে আনা হলো এক লম্বা দাড়িওয়ালা, ঢোলা ট্রাউজার পরিহিত এক ধর্মীয় শিক্ষককে। 

আমার মনে আছে আমাদের কট্টরপন্থী ইতিহাসের শিক্ষক ৭৩২ খ্রিঃ তূরের যুদ্ধের কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, মুসলমানেরা তখন বলেছিল যে, অতি শীঘ্রই ইউরোপে ধ্বনিত হবে আযানের শব্দ। কিন্তু আমার আজ ইচ্ছে করে ঐ শিক্ষককে জানানোর যে, এখন তো ইউরোপের সর্বত্রই আযান ধ্বনিত হচ্ছে। আজকাল এই আযান আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য কাফেরদের দেশেই সবচাইতে জোরালো। ইসলামের এই বিজয় হয়েছে একটিও যুদ্ধ না করে। আমি মনে করি এটা সম্ভব হয়েছে মূঢ় কাফেরদের জন্যেই। এই মূঢ়তা হচ্ছে কাফেরদের আবিষ্কৃত অবাধ গণতন্ত্র। এখন দেখা যাচ্ছে, কাফেরদের এই বোকামির সুযোগ নিয়ে জিহাদিরা পাশ্চাত্য সভ্যতা ধ্বংস করতে খড়্গহস্ত। কাফেরদের তৈরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই আজ তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিহাদিরা এখন এই পশ্চিমা গণতন্ত্রকেই মোক্ষ অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করছে পাশ্চাত্যের সর্বনাশের জন্য। এই সব ধূর্ত ইসলামীদের এখন আর কোনো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয় না। কাফেরদের অস্ত্র দিয়েই ওরা কাফেরদের ঘায়েল করতে চায়। দেখা যাচ্ছে, নির্বোধ কাফেররা হাসিমুখে তুলে দিচ্ছে তাদের অস্ত্র ইসলামীদের হাতে। পশ্চিমা গণতন্ত্র ও অবাধ চিন্তার স্বাধীনতা এখন ইসলামীদের হাতে দু’টি বড় অস্ত্র।

আমরা তাহলে দেখছি, আমাদের বিদ্যালয়ে শুধু ধর্মের শিক্ষকেরাই নয়, প্রতিটি শিক্ষকই ইসলাম নিয়ে বিভোর - দিন, রাত চব্বিশ ঘন্টা, মাস, বছর - যেন আমাদের জীবনে ইসলাম ছাড়া আর কিছুই নেই - ইসলাম আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে। এমনকি আমাদের ইংরেজি ক্লাসেও পড়ানো হয় ইসলাম - মক্কা, মদিনা - এই সবের ইতিহাস। প্রত্যেক টার্মে আমাদেরকে শিখতে হত ছয়টি ইসলামী বিষয়। এগুলো হলো: কোরআন, হাদিস, তফসির, তাজোয়াদ, তৌহিদ, এবং ফিকহ্‌। এছাড়াও প্রতিদিন বিদ্যালয়ে প্রাতঃরাশের পর বিশ্রামের যে সময়টুকু পেতাম, সেটা কাটাতে হতো যোহরের নামায পড়ে। যে সব ছাত্র হাফিয হতে চাইত, তাদেরকে সন্ধ্যাবেলায় আমার বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে হত হাফয-ই কোরআন শেখার জন্য।

এই প্রসঙ্গে অনেকেই হয়তো জানতে চাইবেন যে, গান-সঙ্গীতের কোনো চর্চা ছিল কি না। এ ব্যাপারে বলতে হচ্ছে যে, ইসলামে গান-সঙ্গীতের কোনো স্থান নেই - এ সব একেবারেই হারাম, কেননা গান-সঙ্গীত হলো শয়তানের ধ্বনি।

আমাদের বিদ্যালয়জীবনের দিনগুলোতে সবচাইতে যে-ব্যাপারে বেশি আলোচনা হতো, তা ছিল যে মুজাহিদ্দিনেরা আফগানিস্তান থেকে যুদ্ধ করে ফিরেছে তাদের বিষয়ে। আমাদের প্রাতঃরাশ বিরতির সময় আমরা হাঁ হয়ে শুনতাম ওদের বীরত্বের গাঁথা - কেমন করে একজন মাত্র মুজাহিদ অনেক রাশিয়ান সৈনিককে মেরে ফেলেছে, তাও মাত্র 'আল্লাহু আকবর, লাইলাহা ইল্লা আল্লাহ্' শব্দ উচ্চারণ করে। শুনতাম কেমন অলৌকিকভাবে আহত মুজাহিদ্দিনেরা অনতিবিলম্বে সেরে উঠত। জানতাম কী অপূর্ব সুগন্ধি বাতাসে ভেসে বেড়াত নিহত, পচিত, গলিত শহীদদের লাশ থেকে। এই সব শ্বাসরুদ্ধকর, অবিশ্বাস্য ও অলৌকিক গল্প শুনে আমরা সম্মোহিত হয়ে পড়তাম এবং ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে পড়তাম ঐ সব মুজাদিদের ওপর যারা যুদ্ধে যোগদান করেছে এবং যারা শহীদ হয়েছে আফগানিস্তানে। মনে আমাদের এতই প্রবল প্রেরণা জন্মাতো জিহাদ যুদ্ধে চলে যেতে এবং শহীদ হতে যে, ঐ মুহূর্তেই যেন আমরা সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি হয়ে যেতাম।

এখন আমরা অতি সহজেই বুঝতে পারি যে, অসীম কাফেরভীতি, তাদের প্রতি সীমাহীন ঘৃনা, এবং তাদেরকে মেরে ফেলার অদম্য স্পৃহা, অথবা তাদের হাতে শহীদ হবার অপরিসীম আকাঙ্খাই বহু সৌদি তরুনকে চালিত করেছিল আফগানিস্তানের যুদ্ধে যোগ দিতে। দেখুন, কতজন সৌদি আফগানিস্তান, চেচনিয়া, ইরাক এবং অন্যান্য স্থানে জিহাদ করতে গিয়ে মারা গেছে। এই সব অকুতভয়, মৌলবাদী ইসলামীরা মনে করে, শিক্ষালাভ করা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। সোজাসুজি বেহেস্তে যাবার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে আল্লাহ্‌র জন্যে জিহাদ যুদ্ধে শহীদ হওয়া - এটাই তাদের বেছে নেয়া পথ।

জিহাদি জোশে মাতোয়ারা হয়ে আমরা অনেকেই মনে মনে রাজি হয়ে যেতাম যে, অর্থহীন পার্থিব জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমাদের শহীদের পথে পা বাড়াতে হবে। এই উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকদের মতামত চাইলাম। তাঁদের মতামত ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। অনেকের মত ছিল, আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নই, আমাদের উচিত হবে প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া। অনেক শিক্ষক পরামর্শ দিলেন যে, আমাদের দরকার মুফতির অনুমতি নেওয়া। যদি মুফতি অনুমতি দেন, তবে অবিলম্বে আমাদের পা বাড়াতে হবে কাফেরদের হত্যার জন্য। ঐ সব শিক্ষকেরা বললেন আমাদের বন্দুক, পিস্তল, অথবা কোনো অস্ত্র নেবার দরকার নেই, কারণ যাই-ই হোক আমরাই তো জিতবোই। আর যদি মারা যাই, তবে একেবারে সোজাসুজি বেহেস্তে, আর যদি কাফের হত্যা করে ফিরে আসি, তবে তা হবে ইসলামের বিজয়। যেভাবেই দেখা যাক, আমাদের বিজয় তো অবশ্যম্ভাবী। এই ভাবেই আমরা একেবারেই নিশ্চিত হলাম যে, আমাদের পরাজয় কোনোমতেই হবে না। 

আমার মনে পড়ছে, বিদ্যালয়ে নামায ছিল আমাদের উপর নির্মম অত্যাচার। নিয়মিত নামাযের ওপরেও আমাদেরকে অতিরিক্ত নামায পড়তে বাধ্য করানো হত। আগেই লিখেছিলাম যে, বিদ্যালয় শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে যোহরের নামায পড়তে হত। কিন্তু এটাই আমাদের শেষ আনুষ্ঠানিক ব্যাপার ছিল না। এরপরও আমাদেরকে বাধকতামূলকভাবে পড়তে হত সুন্নত নামায। এ নামায ছিল আমাদের সবচাইতে অপছন্দ। আমাদের শিক্ষকেরা আমাদেরকে জোরজবরদস্তি সহকারে ঐ নামাযে বাধ্য করতেন, শুধু আমাদের নবী ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য।

বিদ্যালয়ের ঐ সব ক্রিয়াকলাপের দরুন আমাদের মনে হত, আমরা যেন নবী মুহম্মদের যুগেই বাস করছি—সেই সুদুর অতীতে। এখন যখন আমি ঐসব দিনগুলির কথা স্মরণ করি, তখন আমার মনে হয় আমরা যেন এক সময় ভ্রমণে (time-travel) ছিলাম, কিন্তু এই ভ্রমন ছিল পশ্চাদ্দিকে। আমরা বাস করতাম বর্তমানে নয় - বরং সপ্তম শতাব্দীতে। এমনকি আমাদের শিক্ষকেরা বলতেন যে, আধুনিক সময় বলতে তালিবান সময়কেই বোঝায় - তালিবান সময় ছাড়া আর কোনো সময় ছিল না, থাকতে পারে না। এই তালিবান সময় আর কিছু না - এ হচ্ছে মুহম্মদের সময়। আমার মনে এটাই হচ্ছে ইসলামী সময় ভ্রমণ যন্ত্র (Islamic Time Machine). 

এ পর্যন্ত আমি আমাদের বিদ্যালয় জীবনের কথা লিখলাম। আফগান যুদ্ধ শেষ হবার পর কাফের রাশিয়ানরা ইসলামী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। আমাদের মুজাহিদ্দিনরা দেশে ফিরে আসে। তখন আমি মনে করেছিলাম যে, জিহাদের প্রতি প্রবল ব্যাকুলতা হয়তো শেষ হবে। এরপর ৯/১১ ঘটল এবং সৌদি আরব অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। আমি মনে করলাম, এবার ইসলামীরা সুপ্ত থাকবে। কিন্তু আমার ভাবনা ছিল একেবারেই ভ্রান্ত।

এটা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার যে, এত কিছু ঘটে যাবার পরও ইসলামীদের ইসলামী জোশের কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আমার অনুজ আমারই বিদ্যালয়ে যায়। সে বলল যে, আমাদের অনেক বিদ্যালয়ের সাথীরা এখন ঐ বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করছে। তারা প্রবল বিক্রমে ইসলামী স্পৃহা যা তারা তাদের সময়ে পেয়েছিল, তা প্রচার করে যাচ্ছে। সত্যি কথা হলো, ঐ ধর্মীয় শিক্ষকেরাই আজকের ইসলামী সন্ত্রাসী। এরা এখন এতই প্রভাবশালী যে, সরকার পর্যন্ত তাদেরকে রীতিমত ভয় পায়। নিশ্চিতভাবে এটা ইসলামী সন্ত্রাসীদের জন্যে এক বিপুল বিজয় - তারা যা চাচ্ছিল তা-ই পেয়ে গেছে। এখন তারা সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, তাদেরকে নড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই। এই সব ওহাবি সন্ত্রাসিরা এখন এতই শক্তিশালী যে, তারা সোজাসুজি বলে, তারাই সৌদি আরবের শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করবে - আর কেউ নয়। ইদানীং তারা যা চাইছিল, তা পেয়ে গেল। নতুন শিক্ষা মন্ত্রী হচ্ছেন কাসেম অঞ্চলের লোক - আর কাসেম হচ্ছে ওহাবি ভূমি। দেখুন ঐ নতুন শিক্ষামন্ত্রীর ছবি (ছবিটা এখানে দেওয়া হলো না। - অনুবাদক)।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন