লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
জিহাদ-যুদ্ধ-ধর্মযুদ্ধ
মক্কায় অবস্থানের সময় (নবী হিসেবে ১৩ বছর) মুহাম্মদ আপাতদৃষ্টিতে শান্তিপ্রিয় বাণীপ্রচারক ছিলেন, যদিও এ মত একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়! দুর্বল মানুষ যেভাবে রাগ-ক্ষোভ বুকের ভেতর পুষে রাখে, মুহাম্মদ ছিলেন ঠিক তেমন জাতের মানুষ। মদিনায় এসে ক্রমশ মুহাম্মদের আসল মরুদস্যু-রূপ প্রকাশ পেতে থাকে, আর তাতে ঘি ঢালতে থাকে মক্কার ১৩ বছরের জমে থাকা রাগ আর ক্ষোভ! চলুন, হাদীসে সন্ধান করি মুহাম্মদের মরুদস্যু-রূপ।
বুখারী-১-৭-৩৩১: মুহাম্মদ বলেন: আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি। (১) আমাকে ত্রাস-ভয়-আতঙ্ক দেখানোর ক্ষমতার মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছে, যে একমাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়। (২) সমস্ত জমীন আমার জন্য পবিত্র ও সালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে; কাজেই আমার উম্মাতের যে কোনো লোক ওয়াক্ত হলেই সালাত আদায় করতে পারবে। (৩) আমার জন্য গনীমতের (যুদ্ধ-হামলায় প্রাপ্ত) মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি। (৪) আমাকে (ব্যাপক) শাফাআতের অধিকার দেওয়া হয়েছে। (৫) সমস্ত নবী প্রেরিত হতেন কেবল তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।
মুসলিম-১-৩১: মুহাম্মদ বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই,-এ কথার সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত এবং আমার প্রতি ও আমি যা নিয়ে এসেছি তার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। এগুলো মেনে নিলে তারা তাদের জানমালের নিরাপত্তা লাভ করবে, তবে শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া; আর তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে।
ইসলামের মূল বিষয় যুদ্ধ বা জিহাদ। জিহাদ ছাড়া ইসলামের ভিত্তি চাকা-ছাড়া গাড়ির মত। চলুন, দেখে আসি হাদীসে!
বুখারী-২-২৬-৫৯৪: মুহাম্মদ-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বলেন: হজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবুল হজ্জ)।
জিহাদ না করার ইচ্ছা মুসলিমকে মুনাফিকের মৃত্যু দেয়! আর তাই কারও উচিত নয় যুদ্ধবিদ্যা ত্যাগ করা।
মুসলিম-২০-৪৬৯৬: মুহাম্মদ বলেছেন: যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো, অথচ কোনদিন জিহাদ করলো না বা জিহাদের কথা তার মনে কোনো দিন উদিতও হলো না, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যু বরণ করলো।
বুখারী-৪-৫২-১৪৬: মুহাম্মদ বলেছেন: এমন এক সময় আসবে যখন এক দল লোক আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের সাথে কি নবী-এর সাহাবীদের কেউ আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ। তারপর (তাঁর বরকতে) বিজয় দান করা হবে। তারপর এমন এক সময় আসবে, যখন জিজ্ঞাসা করা হবে, নবী-এর সাহাবীদের সহচরদের (তাবেঈন) মধ্যে কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ। তারপর তাদের বিজয় দান করা হবে। তারপর এমন এক যুগ সময় আসবে যে, জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন, যিনি নবী-এর সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছে, (তাবে-তাবেঈন)? বলা হবে, হ্যাঁ। তখন তাদের বিজয় দান করা হবে।
মুসলিম-২০-৪৭১২: মুহাম্মদ-কে আমি বলতে শুনেছি, অচিরেই অনেক ভূখণ্ড তোমাদের পদানত হবে। আর শক্রদের মোকাবেলায় আল্লাহই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হবেন। তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন তীর নিক্ষেপের খেলার অভ্যাস ত্যাগ না করে।
মুসলিমের জন্য জিহাদে অংশগ্রহণের চেয়ে বড় কিছুই হতে পারে না, আর মক্কা অধ্যায় শেষ হবার পর মুসলিমের জন্য আর জিহাদ ছাড়া বিকল্প কিছুই নেই! জিহাদের ডাকে তাই পেছন ফেরার সুযোগ নেই কোনো মুসলিমের।
বুখারী-৬-৬০-১১৮: বসে-থাকা মুমিনরা আর জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীগণ সমান নয় (৪:৯৫); আয়াতটি যখন নাযিল হল, তখন মুহাম্মদ বললেন অমুককে ডেকে আন। এরপর দোয়াত, কাঠ অথবা হাড় খন্ড নিয়ে তিনি মুহাম্মদ-এর কাছে আসলেন; তিনি বললেন, লিখে নাও। মুহাম্মদ-এর পেছনে ছিলেন ইবনে উম্মে মাকতুম। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি দৃষ্টিহীন। এরপর তখনই অবতীর্ন হল: (৪:৯৫) গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন।
বুখারী-৪-৫২-৪২: মুহাম্মদ বলেছেন: (মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়ত। যদি তোমাদের জিহাদের ডাক দেওয়া হয়, তা হলে বেড়িয়ে পড়।
জিহাদ সকল ইসলামী আচার-অনুষ্ঠানের থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে। আপনি জিহাদী নন, তার মানে আপনি ইসলামের সঠিক রাস্তায় নেই- নিশ্চিত বলা যায়।
বুখারী-৪-৫২-৪৪: এক ব্যক্তি মুহাম্মদ-এর কাছে এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতূল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (এরপর বললেন) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে এবং (এতটুকু) আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। লোকটি বলল, তা কার সাধ্য? আবু হুরায়রা বলেন: মুজাহিদের ঘোড়া রশিতে বাঁধা থাকা অবস্থায় ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকি লেখা হয়।
বুখারী-৪-৫২-৪৫: মুহাম্মদকে জিজ্ঞাসা করা হলো: ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! মানুষের মধ্যে কে উত্তম? মুহাম্মদ বলেন: সেই মুমিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সাহাবীগণ বললেন: তারপর কে? তিনি বললেন: সেই মুমিন যে, পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান করে আল্লাহকে ভয় করে এবং নিজ অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদে রাখে।
বুখারী-৪-৫২-৬৫: এক ব্যক্তি মুহাম্মদ-এর কাছে এসে বললো: এক ব্যক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যক্তি প্রসিদ্ধির জন্য এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহাদে শরীক হন। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করল? মুহাম্মদ বললেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর কলিমা সুদৃঢ় থাকার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করল সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করল।
বুখারী-৪-৫২-৭২: মুহাম্মদ বলেছেন: জান্নাতে প্রবেশের পর একমাত্র শহীদ ছাড়া আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা পোষণ করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তার কাছে বিদ্যমান থাকবে। সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা করবে যেন দশবার শহীদ হয়; কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে।
বুখারী-৪-৫২-৯৬: মুহাম্মদ বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করে সে যেন জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোনো জিহাদকারীর পরিবার-পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশুনা করে, সেও যেন জিহাদ করল।
বুখারী-৪-৫২-১৪২: মুহাম্মদ বলেছেন: আল্লাহর পথে কাফেরদের বিরুদ্ধে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তার চাইতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চিবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চাইতে উত্তম।
বুখারী-৪-৫২-১৯৬: মুহাম্মদ বলেছেন: আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের সাথে লড়াইয়ের আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে আর যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলবে সে তার জান ও মাল আমার হাত থেকে নিরাপদ করে নিলো। অবশ্য ইসলামের বিধান আলাদা, আর তার (প্রকৃত) হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত।
আপনার জন্য সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ হচ্ছে জিহাদের জন্য সকল সম্পদ ব্যয় করা! সাথে নিজের প্রাণ দেওয়াটা অতিরিক্ত!
বুখারী-২-২৪-৫২২: মুহাম্মদ বলেছেন: প্রতিদিন সকালে দুজন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! জিহাদের জন্য দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।
বুখারী-৬-৬০-৪১: হুযায়ফা থেকে বর্ণিত যে: এ আয়াত আল্লাহর পথে জিহাদে ব্যয় করা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। (২:১৯৫) তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না এবং কল্যাণকর কাজ করে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণকারীদেরকে ভালবাসেন।
মুসলিম-২০-৪৬৬৮: মুহাম্মদ বলেছেন: যে আল্লাহর রাস্তায় কোনো যোদ্ধাকে যুদ্ধোপকরণে সজ্জিত করে দিলো, সেও জিহাদ করলো, যে ব্যক্তি কোনো যোদ্ধার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারবর্গের দেখাশোনা করলো, সেও জিহাদই করলো।
বুখারী-১-৩-১২৫: এক ব্যক্তি মুহাম্মদ– এর কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ কোনটি, কেননা আমাদের কেউ লড়াই করে রাগের বশীভূত হয়ে, আবার কেউ লড়াই করে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য। তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর মাথা তোলার কারণ ছিল যে, সে ছিল দাঁড়ানো। এরপর তিনি বললেন: আল্লাহ্র দ্বীনকে সুদৃঢ় করার জন্য যে যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর রাস্তায়।
নিজের প্রাণ দিয়ে কাল্পনিক বেহেস্ত যাবার সোজা পথের সন্ধান দিয়ে দিলাম, নিজেই পড়ে দেখুন!
বুখারী-১-২-৩৫: মুহাম্মদ বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় (জিহাদে) বের হয়, যদি সে শুধু আল্লাহ্র উপর ঈমান এবং তাঁর রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাসের কারণে বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্ তাআলা ঘোষণা দেন যে, আমি তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনবো তার সওয়াব বা গনীমত (ও সওয়াব) সহ কিংবা তাকে জান্নাতে দাখিল করবো। আর আমার উম্মতের উপর কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোনো সেনাদলের সাথে না গিয়ে বসে থাকতাম না। আমি অবশ্যই এটা পছন্দ করি যে, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই।
বুখারী-২-১৩-৩০: আবায়া ইবন রিফাআ মুহাম্মদকে বলতে শুনেছেন, যার দুই পা আল্লাহ্র পথে (জিহাদে) ধুলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।
বুখারী-২-১৫-৮৬: মুহাম্মদ বলেছেন: যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল, অনান্য দিনের আমলের তুলনায় উত্তম। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? মুহাম্মদ বললেন: জিহাদও নয়, যতক্ষন না সে ব্যক্তি নিজের জান ও মালের ঝুকি নিয়েও আল্লার রাস্তায় জিহাদ না করে।
মুসলিম-২০-৪৬৪৯: মুহাম্মদ বলেন: ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গুনাহই মাফ করে দেওয়া হবে।
মুসলিম-২০-৪৬৮১: মুহাম্মদ বলেন: নিশ্চয়ই জান্নাত রয়েছে তরবারীর ছায়ায়। তখন আলুথালু এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো এবং বললো, হে আবু মুসা! আপনি কি নিজে রাসুলুল্লাহ-কে তা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তখন সে ব্যক্তি তার সাথীবর্গের কাছে ফিরে গেলো। তারপর বললো, আমি তোমাদেরকে (বিদায়ী) সালাম জানাচ্ছি। এরপর সে তার তরবারীর কোষ (কভার) ভেঙ্গে ফেলে তা দুরে নিক্ষেপ করলো। তারপর নিজ তরবারীসহ শক্রদের কাছে গিয়ে উপনীত হলো। এবং তা দিয়ে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল।
মুসলিম-২০-৪৬৯৪: মুহাম্মদ বলেন: যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের আকাংখা করে আল্লাহ তাকে তা (অর্থাৎ তার সাওয়াব) দিয়ে থাকেন-যদিও সে শাহাদাত লাভের সুযোগ না পায়।
তবে যদি আপনি জিহাদে জয়লাভ করতে পারেন, তবে যুদ্ধেপ্রাপ্ত সম্পত্তি তো আপনার জন্য বোনাস!
বুখারী-৩-৩৪-৩১৩: আবু কাতাদা থেকে বর্নিত: আমরা রাসুলুল্লাহ্-এর সঙ্গে হুনায়নের যুদ্ধে গেলাম। তখন তিনি আমাকে একটি বর্ম দিয়েছিলেন। আমি সেটি বিক্রি করে তার মূল্য দ্বারা বনু সালিমা গোত্রের এলাকায় অবস্থিত একটি বাগান খরিদ করি। এ ছিল ইসলাম গ্রহনের পর আমার প্রথম স্থাবর সম্পত্তি অর্জন।
বুখারী-৪-৫৩-৩৭৪: মুহাম্মদ বলেছেন: আমি কুরাইশদের সম্পদ/গনীমত দিয়ে থাকি তাদের মন রক্ষা করার জন্য। কেননা, তারা (ইসলামে নতুন) জাহেলী যুগের কাছিকাছি।
বুখারী-৫-৫৯-৩৭৭: এক ব্যক্তি উহুদ যুদ্ধের দিন মুহাম্মদকে বললেন: আপনি কি মনে করেন, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তাহলে আমি কোথায় অবস্থান করব? তিনি বললেন, জান্নাতে। তারপর উক্ত ব্যক্তি হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেললেন, এরপর তিনি একাই লড়াই করলেন। অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন।
বুখারী-৫-৫৯-৫৩৭: খায়বার যুদ্ধের দিন মুহাম্মদ ঘোড়ার জন্য দুই অংশ এবং পদাতিক যোদ্ধার জন্য এক অংশ হিসেবে (গনীমতের) সম্পদ বন্টন করেছেন। বর্ণনাকারী [উবায়দুল্লাহ্ ইবনে উমর] বলেন, নাফি হাদীসটির ব্যাখ্যা করে বলেছেন, (যুদ্ধে) যার সঙ্গে ঘোড়া থাকে তার জন্য তিন অংশ এবং যার সঙ্গে ঘোড়া থাকে না, তার জন্য এক অংশ।
বুখারী-৪-৫২-৬৩: লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তি মুহাম্মদের কাছে এসে বলল, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যুদ্ধে শরীক হবো, না ইসলাম গ্রহণ করব? তিনি বললেন, ‘ইসলাম গ্রহণ কর, তারপর যুদ্ধে যাও।’ তারপর সে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত বরণ করল। মুহাম্মদ বললেন, ‘সে অল্প আমল করে বেশী পুরস্কার পলে।’
বুখারী-৪-৫৩-৩৫১: মুহাম্মদ বলেছেন: আমার জন্য গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে।
বুখারী-৪-৫৩-৩৫২: মুহাম্মদ বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তাঁরই বাণীর প্রতি দৃঢ়াস্থায় তাঁরই পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, আল্লাহ তার জিম্মা গ্রহণ করেছেন, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সে যে সাওয়াব ও গনীমত অর্জন করেছে তা সহ তাকে ঘরে ফিরাবেন, যেখানে সে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো।
আপনি যদি মুহাম্মদের মত নারীশরীর-কাতর হয়ে থাকেন, তবে জিহাদে অংশগ্রহণে আছে আপনার জন্য বিশাল ফায়দা!
বুখারী-৩-৩৪-৪৩১: সাফিয়া বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি দিহয়া কালবী-এর ভাগে পড়েন, এর পরে তিনি মুহাম্মদের অধীনে এসে যান।
বুখারী-৩-৩৪-৪৩২: আবু সাঈদ খুদরী সূত্রে বর্নিত: একদা তিনি মুহাম্মদের নিকট বসা ছিলেন, তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্, আমরা যুদ্ধবন্দী দাসীর সাথে সংগত হই; কিন্তু আমরা তাদের (বিক্রয় করে) মূল্য হাসিল করতে চাই। এমতাবস্থায় আযল (নিরুদ্ধ সঙ্গম) সম্পর্কে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তোমরা কি এরুপ করে থাক? তোমরা যদি তা (আযল) না কর, তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ মহান আল্লাহ্ তাআলা যে সন্তান জন্ম হওয়ার ফায়সালা করে রেখেছেন, তা অবশ্যই জন্মগ্রহন করবে।
বুখারী-৯-৮৩-২৯: আমরা নবী–এর সাথে খায়বার অভিমুখে রওয়ানা হলাম। তখন তাদের এক ব্যক্তি বলল, হে আমির! আমাদেরকে উট চালনার কিছু সঙ্গীত শোনাও। সে তাদেরকে তা গেয়ে শোনাল। তখন নবী বললেন, চালকটি কে? তারা বলল, আমির। তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদেরকে তার থেকে দীর্ঘকাল উপকৃত হবার সুযোগ করে দিন। পরদিন সকালে আমির নিহত হল। তখন লোকেরা বলতে লাগল তার আমল বরবাদ হয়ে গেছে, সে নিজেকে হত্যা করেছে। যখন আমি ফিরলাম, আর লোকেরা বলাবলি করছিল যে, আমিরের আমল বরবাদ হয়ে গেছে, তখন আমি নবী–এর নিকট এলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান। তাদের ধারনা, আমিরের আমল বরবাদ হয়ে গেছে। তিনি বললেন, যে এমনটা বলেছে মিথ্যা বলেছে। কেননা, আমিরের জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার। কারণ সে (সৎ কাজে) অতিশয় যত্নবান, (আল্লাহর রাস্তায়) মুজাহিদ। অন্য কোন প্রকার হত্যা এর চেয়ে অধিক পুরস্কারের অধিকারী করতে পরে না।
বুখারী-৪-৫২-২১০: শত্রুদের সাথে কোন এক মুখোমুখি যুদ্ধে মুহাম্মদ সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন: হে লোক সকল! শত্রুর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়ার কামনা করবে না এবং আল্লাহ্ তাআলার নিকট নিরাপত্তার দুআ করবে। তারপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে অবস্থিত। তারপর মুহাম্মদ দুআ করলেন, হে আল্লাহ্! কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্যদলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।
বুখারী-৪-৫২-২৬৫: মুহাম্মদ আনসারীগণের এক দলকে আবু রাফে ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে।
বুখারী-৪-৫২-২৮৬: মুহাম্মদের কোন এক সফরে মুশরিকদের একদল গুপ্তচর তাঁর নিকট এল এং তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল ও কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। তখন মুহাম্মদ বললেন, ‘তাকে খুঁজে আনো এবং হত্যা কর।’ মুহাম্মদ তার মালপত্র হত্যাকারীকে দিয়ে দিলেন।
বুখারী-৪-৫৩-৩৬৭: মুহাম্মদ বদরের যুদ্ধে বন্দীদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি মুতায়িম ইবনে আদী জীবিত থাকতেন আর আমার নিকট এ সকল নোংরা লোকের ব্যাপারে সুপারিশ করতেন, তবে আমি তাঁর খাতিরে এদের ছেড়ে দিতাম।
বুখারী-৮-৮২-৭৯৫: মুহাম্মদ উরাইনা গোত্রীয় লোকদের (হাত, পা) কাটলেন, অথচ তাদের ক্ষত স্থানে লোহা পুড়ে দাগ দেননি। অবশেষে তারা রক্তপাতে মারা গেল।
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যা খুশি করার অনুমতি দিয়েছেন ইসলামের নবী মুহাম্মদ।
বুখারী-৫-৫৯-৪৪৯: মুহাম্মদ, হাসসান-কে বলেছেন: কবিতার মাধ্যমে তাদের (কাফেরদের) দোষত্রুটি বর্ণনা কর অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করার জবাব দাও। (তোমার সাহায্যার্থে) জিব্রাঈল তোমার সাথে থাকবেন। (অন্য এক সনদে) বারা ইবনে আযিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মুহাম্মদ বনী কুরায়যার সাথে যুদ্ধ করার দিন হাসান ইবন আযিব-কে বলেছিলেন (কবিতার মাধ্যমে) মুশরিকদের দোষত্রুটি বর্ণনা কর। এ ব্যাপারে জিব্রাঈল তোমার সাথে থাকবেন।
মুসলিম-৩১-৬০৭৪: মুহাম্মদ, হাসসান ইবনে সাবিতকে নির্দেশ দিতে শুনেছি: তাদেরকে (কাফিরদেরকে) কবিতার মাধ্যমে বিদ্রূপ কর, জিব্রাঈল তোমার সাথে আছে।
বুখারী-৯-৯৩-৫৪৯: মুহাম্মদ বলেছেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্য নিয়ে যে ব্যক্তি বের হয়, আর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং তাঁর কলেমার বিশ্বাসই যদি তাকে বের করে থাকে, এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্ স্বয়ং যিম্মাদার হয়ে যান। হয়তো তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, নয়তো যে স্থান থেকে সে বের হয়েছিল সাওয়াব কিংবা গনীমতসহ তাকে সে স্থানে প্রত্যাবর্তন করাবেন।
এবার আসল কথা দিয়ে এ অধ্যায় শেষ করছি: দ্বীনের নবী মুস্তফায় রাস্তা দিয়া হাঁইটা যায়, বেহেস্তখানি বান্ধা ছিলো তরবারীর ছায়ায়!
বুখারী-৪-৫২-৭৩: মুহাম্মদ বলেছেন: তোমরা জেনে রাখো, তরবারীর ছায়ার নীচেই জান্নাত।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন