লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
জিজিয়া ও যিম্মী
ইসলামী ভূখণ্ডে ইহুদী-খ্রিষ্টানকে অবশ্যই তাদের সকল আয়ের ৫০ ভাগ ইসলামী সরকারকে কর বা জিজিয়া হিসেবে দিতে হবে; মুহাম্মদ নিজে এ প্রথা প্রচলন করেছিলেন! জিজিয়া দেবার পরেও আপনার পরিচয় হবে যিম্মী (dhimmi - "protected person") হিসেবেই!
বুখারী-৪-৫৩-৩৮৮: জুরায়রিয়া ইবনে কুদামা তামীমী, উমর ইবনে খাত্তাব-কে বললেন: 'হে আমিরুল মুমিনীন! আমাদের কিছু অসীয়্যাত করুন।' তিনি বললেন, 'আমি তোমাদের আল্লাহর অঙ্গীকার রক্ষার অসীয়্যাত করছি। কারণ এ হল তোমাদের নবীর অঙ্গীকার এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনের জীবিকা।'
বুখারী-৪-৫৩-৩৮০: উমর ইবনে খাত্তাব, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে হিজায ভূখণ্ড থেকে নির্বাসিত করেন। আর মুহাম্মদ যখন খায়বার জয় করেন, তখন তিনিও ইয়াহুদীদের সেখান থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। আর সে জমীন বিজিত হওয়ার পর তা আল্লাহ, মুহাম্মদ ও মুসলিমগণের অধিকারে এসে গিয়েছিল। তখন ইয়াহুদীরা মুহাম্মদ-এর নিকট আবেদন করল, যেন তিনি তাদের এ শর্তে থাকার অনুমতি দেন যে, তারা কৃষি কাজ করবে এবং তাদের জন্য অর্ধেক ফসল থাকবে। তখন মুহাম্মদ বলেছিলেন, যতদিন আমরা চাই তোমাদের এ শর্তে থাকার অনুমতি দিচ্ছি। তারা এভাবে রয়ে গেল। অবশেষে উমর ইবনে খাত্তাব তাঁর শাসনামলে তাদের তায়মা আরীহা নামক স্থানের দিকে নির্বাসিত করেন।
মুহাম্মদের জীবনের বড় অংশ জুড়ে ছিলো প্রায় ৬০ জন (৩৬ জন পুরুষ, ২৪ জন মহিলা) দাস-দাসীর শ্রম আর ঘামের গন্ধ! দাস-দাসী-মানুষ ক্রয়-বিক্রি ছিলো মুহাম্মদ এবং তার সাহাবীদের আয়ের খুব বড় একটি অংশ। হাদীসে তার স্পষ্ট হদিস পাওয়া যায়, এ অধ্যায়ে আমরা দাস-দাসীদের নিয়ে ইসলামের প্রথম পাঠ জেনে নিতে পারব অনায়াসে।
বুখারী-৭-৬২-১৩২: মুহাম্মদ বলেছেন: তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সাথে তো মিলিত হবে।
মুসলিম-০১-০১৩১: মুহাম্মদ বলেছেন: যখন দাস পালিয়ে যায়, তখন তার নামাজ কবুল হয় না।
বুখারী-৩-৩৪-৩৬২: মুহাম্মদ বলেছেন: যদি বাঁদী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমানিত হয়, তবে তাকে বেত্রাঘাত করবে, আর তিরস্কার করবেনা। তারপর যদি আবার ব্যভিচার করে তাকে বেত্রাঘাত করবে, তিরস্কার করবেনা। এরপর যদি তৃতীয়বার ব্যভিচার করে তবে তাকে বিক্রি করে দিবে, যদি পশমের রশির (ন্যায় সামান্য বস্তুর) বিনিময়েও হয়।
বুখারী-৩-৪৬-৭২৩: মুহাম্মদ বলেছেন: যে লোক তাঁর বাঁদীকে উত্তমরুপে জ্ঞান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এবং তাকে আযাদ করে ও বিয়ে করে, সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে। আর যে গোলাম আল্লাহর হক আদায় করে এবং মনিবেরও হক আদায় করে, সেও দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে।
বুখারী-৩-৪৮-৮২৭: উকবা ইবনে হারিস থেকে বর্ণিত যে: তিনি উম্মু ইয়াহইয়া বিনতে আবু ইহাবকে বিয়ে করলেন। তিন বলেন: তখন কালো বর্ণের এক দাসী এসে বলল, আমি তো তোমাদের দুজনকে দুধপান করিয়েছি। সে কথা আমি মুহাম্মদ-এর কাছে উত্থাপন করলে তিনি আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি সরে গেলাম। পরে এসে বিষয়টি (আবার) তার কাছে উত্থাপন করলাম। তিনি তখন বললেন, (এ বিয়ে হতে পারে) কী ভাবে? সে তো দাবী করছে যে, তোমাদের দুজনকেই সে দুধ পান করিয়েছে। এরপর তিনি তাকে (উকবাকে) তার (উম্মু ইহাবের) সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করতে বললেন।
বুখারী-৩-৩৬-৪৮৩: মুহাম্মদ দাসীদের দিয়ে অবৈধ উপার্জন (পতিতাবৃত্তি) নিষিদ্ধ করেছেন।
বুখারী-৩-৪৬-৭০২: ইবনে উমর থেকে বর্ণিত: তিনি শরীকী গোলাম বা বাঁদী সম্পর্কে ফাতওয়া দিতেন যে, শরীকী গোলাম শরীকদের কেউ নিজের অংশ আযাদ করে দিলে তিনি বলতেন, সম্পূর্ণ গোলামটাই আযাদ করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে। যদি আযাদকারীর কাছে গোলামের মূল পরিমাণ অর্থ থাকে, তাহলে সে অর্থ থেকে গোলামের নায্যমূল্য নির্ণয় করা হবে এবং শরীকদের তাদের প্রাপ্য হিস্যা পরিশোধ করা হবে, আর আযাদকৃত গোলাম পূর্ণ আযাদ হয়ে যাবে।
বুখারী-৩-৩৮-৫০০: ইবনে কাব ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত: তার কতকগুলো ছাগল-ভেড়া ছিলো, যা সাল্ নামক স্থানে চড়ে বেড়াতো। একদিন আমাদের এক দাসী দেখল যে, আমাদের ছাগল-ভেড়ার মধ্যে একটি ছাগল মারা যাচ্ছে। তখন সে একটা পাথর ভেংগে তা দিয়ে ছাগলটাকে যবেহ করে দিলো। কাব তাদেরকে বলেন, তোমরা এটা খেয়ো না, যে পর্যন্ত না আমি মুহাম্মদ-কে জিজ্ঞাসা করে আসি অথবা কাউকে মুহাম্মদ-এর নিকট জিজ্ঞাসা করতে পাঠাই। মুহাম্মদ তা খাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন। উবায়দুল্লাহ বলেন, এ কথাটা আমার কাছে খুব ভালো লাগল যে, দাসী হয়েও সে ছাগলটাকে যবেহ করলো।
বুখারী-৩-৪৭-৭৪৩: এক মুহাজির মহিলার কাছে মুহাম্মদ লোক পাঠালেন। তাঁর এক গোলাম ছিল কাঠ মিস্ত্রী। তিনি তাকে বললেন, তুমি তোমার গোলামকে বল, সে যেন আমাদের জন্য একটা কাঠের মিম্বার বানিয়ে দেয়। তিনি তার গোলামকে নির্দেশ দিলেন। যে গিয়ে এক প্রকার গাছ কেটে এনে মিম্বার তৈরী করল। কাজ শেষ হলে তিনি মুহাম্মদ-এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, গোলাম তার কাজ শেষ করেছে। তিনি বললেন, সেটা আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। তখন লোকেরা সেটা নিয়ে এলো। মুহাম্মদ সেটা বহন করে সেখানে স্থাপন করলেন, যেখানে তোমরা (এখন) দেখতে পাচ্ছ।
বুখারী-৫-৫৮-২৬২: সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করলেন মুসআব ইবনে উমায়ের ও ইবনে উম্মে মাকতুম। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসলেন, বিলাল, সাদ ও আম্মার ইবনে ইয়াসির এরপর উমর ইবনে খাত্তাব। তারপর মুহাম্মদ আগমন করলেন। তিনি বিশজন সাহাবীসহ মদীনায় আসলেন। তাঁর আগমনে মদীনাবাসী যে পরিমাণ আনন্দিত হয়েছিল সে পরিমান আনন্দ হতে কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীগণও বলছিল নবী মুহাম্মদ শুভাগমন করেছেন।
বুখারী-৮-৭৩-২২৯: মুহাম্মদ এক সফরে ছিলেন। তাঁর আনজাশা নামে এক গোলাম ছিল। সে হুদী গান গেয়ে উটগুলো হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাকে বললেন: হে আনজাশা! তুমি ধীরে উট হাকাও, যেহেতু তুমি কাচপাত্র তুল্যদের (আরোহী) উট চালিয়ে যাচ্ছ। আবু কিলাবা বর্ণনা করেন, কাচপাত্র সদৃশ শব্দ দ্বারা মুহাম্মদ মহিলাদের বুঝিয়েছেন।
আফ্রিকার ইথিউপিয়াকে তৎকালীন সময়ে বলা হতো হাবাশা, আর হাবাশার জনগণকে বলা হতো হাবশী; ইথিউপিয়ার মানুষেরা ছিলেন কালো বর্ণের; মুহাম্মদ কতখনি বর্ণবাদী মানসিকতার ছিলেন, তার পরিচয় পাওয়া যাবে এবার।
বুখারী-১-১১-৬৬২: মুহাম্মদ বলেছেন: তোমরা শোনো ও আনুগত্য প্রকাশ কর, যদিও তোমাদের উপর এমন কোন হাবশীকে আমীর নিযুক্ত করা হয় – যার মাথা কিসমিসের মতো।
বুখারী-২-২৬-৬৬১: মুহাম্মদ বলেছেন: হাবশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কাবাঘর ধ্বংস করবে।
বুখারী-৯-৮৭-১৬৩: মুহাম্মদ বলেছেন: আমি স্বপ্নে দেখেছি। এলোমেলো চুল বিশিষ্ট একজন কালো মহিলা মদীনা থেকে বের হয়ে মাহাইয়া তথা জুহফা নামক স্থানে গিয়ে থেমেছে। আমি এর ব্যাখ্যা এরূপ দিলাম যে, মদীনার মহামারী তথায় স্থানান্তরিত হলো।
বুখারী-৪-৫২-৩০৯: রাফি ইবনে খাদীজ বলেছেন: আমরা আশা কিংবা আশংকা করি যে, আমরা আগামীকাল শত্রুর মুখোমুখী হব। আর আমাদের সঙ্গে ছুরি নেই। আমরা কি বাঁশের ধারালো চোকলা দ্বারা যবেহ করব? মুহাম্মদ বললেন: যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং (যার যবেহকালে) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে তা আহার কর। কিন্তু দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। কারণ আমি বলে দিচ্ছি: তা এই যে, দাঁত হলো হাঁড় আর নখ হল হাবশীদের ছুড়ি।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন