লিখেছেন আক্কাস আলী
- স্যার, আসবো?
- Yes... Come in...
- আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
[মাথা নেড়ে সালামের জবাব দিলেন, অতঃপর বসতে ইশারা করলেন]
- Introduce yourself...
- I am Akkas Ali Mohammad Bin Abdul Kuddus. I live in Chittagong. I am a sunni muslim. I read in Al-Jamiatul Ahlia Darul Ulum Muinul Islam. It also has another name, it is Hathazari Madrassa. My favorite teacher's name is Allama Shah Ahmad Shafi...
- Okay, Okay, বুঝলাম। তো আক্কাস সাহেব, আপনি এখানে পাঞ্জাবি-টুপি পরে কেন এসেছেন? ড্রেস কোড ফলো করেননি। এর কারণটা কী?
- স্যার, এইসব হচ্ছে সুন্নতী পোশাক। হুজুরে পাক (সাঃ) এইরকম পোশাকই পরিধান করতেন।
- বুঝলাম। কিন্তু নবীজি এ ধরনের পোশাক পরতেন তার দেশের আবহাওয়াগত কারণে। বড় কোর্তা আর মাথার উপর টুপি বা পাগড়ি রাখতে হতো মরু অঞ্চলে সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্যে। শুধু নবীজি নন, কাফেররাও তখন একই ধরনের পোশাক পরতেন। বোঝা গেলো? আপনি এখানে এসব পরে থাকবেন কোন দুঃখে? আরেকটা কথা, নবীজি তো উটে চড়ে যাতায়াত করতেন, আপনি উটে চড়ে আসলেন না কেন? সুন্নত কি কেবল নিজের সুবিধা অনুযায়ী?
- জানি না, স্যার।
- আচ্ছা, বাদ দিন। আপনি তো চট্টগ্রামের ছেলে। চট্টগ্রামের কয়েকটা দর্শনীয় স্থানের নাম বলুন।
- চট্টগ্রামে অনেক অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। যেমন ধরেন, হযরত খাজা গরীবুল্লাহ শাহ (রঃ) এর মাজার, বায়েজিদ বোস্তামির মাজার, শাহ আমানত (রঃ) এর মাজার, আমাদের বড় মাদ্রাসা, আর... আর...
[উত্তর শুনে ভাইবা বোর্ডের সবাই একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছিলেন। অতঃপর একদম ডানপাশে বসা মাথায় বিশাল টাকওয়ালা স্যার আমাকে প্রশ্ন করলেন।]
- আক্কাস সাহেব, চলুন, প্রথমেই ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আপনি কী কী জানেন, সংক্ষেপে বলুন। কেন এবং কী কারণে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? যুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা কী ছিলো?
- ১৯৭১ সালে যুদ্ধ হয়েছিলো। সেই যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান ভেঙে দুই টুকরা হয়ে যায়। আসলে ভারতের হিন্দুরা ষড়যন্ত্র করে এই যুদ্ধ লাগিয়েছিলো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানদের ঐক্য নষ্ট করতে। আর আপনি একটা বিরাট ভুল কথা বলেছেন স্যার, জাতির জনক শেখ মুজিব না। আমাদের পরিচয় একটাই - আমরা মুসলমান। আর আমাদের জাতির পিতা হইলো হযরত ইব্রাহিম (আঃ)।
[সবাই চুপ মেরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন শুরু করলেন পাশের ম্যাডাম]
- সাধারণ বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা যাক। আচ্ছা, বলুন তো, দিন ও রাত সংঘটিত হওয়ার কারণ কী? দিন-রাতের দৈর্ঘ্য হ্রাস-বৃদ্ধিই বা কেন হয়?
- দিনের বেলা সূর্য থাকে, তাই দিন। আর রাতের বেলা সূর্য আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সেজদায় পড়ে যায়। তখন সূর্য থাকে না বলে রাত হয়। আল্লাহ অনুমতি দিলে পরের দিন সুর্য উঠে দিন শুরু হয়। (বুখারি, খণ্ড ৪, বই ৫৪, হাদিস ৪২১)
- তার মানে, সুর্য যখন আরশের নিচে সেজদায় যায়, তখন পৃথিবীর কেউই সুর্যকে দেখতে পায় না? সব দেশেই রাত হয় একসাথে?
[রুমের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেলো। আমি বিব্রত বোধ করলাম। অতঃপর আবার প্রশ্ন!]
- মানুষের জ্বর কেন হয়? জ্বর হলে কী করা উচিত? তাপমাত্রা কত উঠলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে?
- জ্বর হইলো আল্লাহর গজব, আল্লাহ আমাদের শাস্তি দেন জ্বরের মাধ্যমে। জাহান্নামের আগুনের তাপ যখন আমাদের গায়ে এসে লাগে, তখনই আমাদের জ্বর হয়। (বুখারি, খণ্ড ৭, বই ৭১, হাদিস ৬১৯) জ্বর হইলে ঠাণ্ডা পানি ঢালতে হইবে আর নিজ গুনাহের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ঔষধ হিসেবে কালিজিরা খাওয়াইলে জ্বর ভালো হবে ইনশাল্লাহ। শুধু জ্বর না, কালিজিরাতে সব রোগের নিরাময় রয়েছে। (বুখারি, খণ্ড ৭. বই ৭১, হাদিস ৫৯২)
- তেলাপোকা চেনেন? এরা কোন পর্বের প্রাণী? এদের চোখের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
- অত কিছু জানি না। তবে তেলাপোকা হইলো বিশেষ এক ধরনের পাখি।
- তা ঠিক বলেছেন। বাংলাদেশে অনেক অনেক তেলাপোকা রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ তেলাপোকাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদেরকে পাখিদের দলভুক্ত করাই উত্তম কাজ। আচ্ছা, আক্কাস সাহেব, আমার মনে হয় আপনি ক্লাস সেভেন-এইটের বিজ্ঞানটাও ভালোমতো জানেন না। অনেক ফাঁকিঝুকি দিয়েছেন নিশ্চয়ই ছাত্রজীবনে?
- না, স্যার। আসলে সেই প্রাইমারী লেভেল থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত কোনো ক্লাসেই আমরা বিজ্ঞান পড়ি নাই। আমরা পড়ছি ইসলামের ইতিহাস, কোরান, আরবি ও ফার্সি ব্যাকরণ, বুখারি-মুসলিম-তিরমিজি, ফিকহ এইসব। তবে ইংলিশে আমি অনেক ভালো। ফার্মগেট থেকে "৭ দিনে ইংরেজি শিখুন" নামে একটা বই কিনছিলাম, ঐটা পড়েই ইংলিশের জাহাজ হইছি।
- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো লাগলো কথা বলে। এখন আপনি আসতে পারেন।
- চাকরিটা হবে তো, স্যার?
- হবে হবে... মাস্টার্সের ছাট্টিফিকেট যেহেতু পেয়েছেন, চাকরিও পাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন