লিখেছেন সিরাজুল হক
অনলাইনে ও অফলাইনে ইছলামী অপপ্রচার চলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। মিথ্যা, ভুয়া ও অবাস্তব ইছলামী দাবিও নিঃশর্তে মেনে নিয়ে "আলহামদুলিল্লাহ"-র ঢেঁকুর তোলে তথ্য যাচাইয়ে অনীহ মুছলিমরা। অবশ্য কুয়ার ব্যাঙ কুয়ার বাইরের খবর রাখবে, তেমন আশা করাটাও নির্বুদ্ধিতা।
কোরানে নাকি এমন সব বৈজ্ঞানিক তথ্য দেয়া আছে, যেগুলো নাকি সেই যুগে অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অজানা তো ছিলোই, এমনকি কোরানে উল্লেখিত সেই তথ্যগুলো নাকি সাম্প্রতিক বিজ্ঞান সবে আবিষ্কার করছে!
৭.
ইছলামী দাবি: পৃথিবীতে রাত এবং দিন বাড়া এবং কমার রহস্য মানুষ জেনেছে দু'শ বছর আগে। সূরা লুকমানের ২৯ নং আয়াতে কুরআন এই কথা জানিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে !!
বাস্তবতা: সুরা লোকমানের ২৯ নাম্বার আয়াতে শুধু বলা হয়েছে যে, দিনের পর রাত আসে, আর সূর্য-চন্দ্র নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে ("তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।"); এই তথ্য তো সেই আমলের যে কোনো জ্যোতির্বিদই জানতো। এর জন্য আল্লাহ লাগে? আর এখানে কোথায় বলা হয়েছে যে, সূর্যের বিভিন্ন অবস্থানের কারণে দিনের ও রাতের দৈর্ঘ্য আলাদা হয়? এমনকি সে আভাস পর্যন্ত এখানে নেই। কেন নেই, জানেন? কারণ মুহাম্মদ-এর মক্কা ছিলো মধ্যপ্রাচ্যে, যেখানে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য খুব সামান্য। এবং ঠিক এই কারণেই ইসলামে ৩০ দিন রোজার মতো একটা আপাদমস্তক অবৈজ্ঞানিক একটি রীতি আছে, যেটা মেরু অঞ্চলে পালন করা অসম্ভব (মরু আর মেরুর তফাতও নবী জানতে না), কারণ ওখানে হয় ৬ মাস দিন থাকে, আর ৬ মাস রাত। এতেই বোঝা যায়, ইসলাম আসলে সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য নয়।
৮.
ইছলামী দাবি: পৃথিবী দেখতে কেমন? এক সময় মানুষ মনে করত পৃথিবী লম্বাটে, কেউ ভাবত পৃথিবী চ্যাপ্টা , সমান্তরাল... কোরআন ১৪০০ বছর আগে জানিয়ে গেছে পৃথিবী দেখতে অনেকটা উট পাখির ডিমের মত গোলাকার।
বাস্তবতা: কোরানের কোন আয়াতে বলা আছে, পৃথিবীর আকার উটপাখির ডিমের মতো? রেফারেন্স কোথায়? নেই। কারণ, আধুনিক মুসলিমদের নবী জোকার নালায়েক বিচিত্র ও বিবিধ ত্যানা পেঁচিয়ে ও জোড়াতালি দিয়ে এ কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও কোরানের অসংখ্য অনুবাদের কোত্থাও উটপাখির ডিমের কথা উল্লেখ নেই।
তর্কের খাতিরে তবু যদি ধরে নেয়া হয় যে, "কোরানে বলা আছে - পৃথিবীর আকার উটপাখির ডিমের মতো এবং এমন তথ্য কোরানেই প্রথম পাওয়া যায়", সে দাবিও ধোপে টেকে না। কারণ খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সালের আগে পিথাগোরাস এই কথা বলে গেছেন। এবং সেটা ইসলাম আবির্ভাবের ১১০০ বছর পূর্বে।
৯.
ইছলামী দাবি: ভ্রূণতত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞান আজ জেনেছে পুরুষই ( শিশু ছেলে হবে কিনা মেয়ে হবে) তা নির্ধারণ করে। ভাবা জায়... কুরআন এই কথা জানিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। ( সূরা নজমের ৪৫, ৪৬ নং আয়াত, সূরা কিয়ামাহ’র ৩৭- ৩৯ নং আয়াত)
বাস্তবতা: সুরা আন-নাজম ৪৫-৪৬ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, "এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী, একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়।" এখানে যদি ভ্রূণ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, তাহলে আয়াতদ্বয় অনুযায়ী - প্রত্যেক ভ্রুণ থেকে এক জোড়া নারী-পুরুষ সৃষ্টি হবার কথা। আমরা সবাই জানি, বাস্তবে তা হয় না। যা মনে চায় ব্যাখ্যা দিলেই হলো, তাই না? আর সুরা আল ক্বেয়ামাহ ৩৭-৩৯ আয়াত দুটো বলে, "সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না? অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।" এখানে ভ্রূণতত্ত্ব কোথায়? আর কোথায়ই বা বলা হয়েছে, হবু-সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে হবে?
মুসলিমদের কী মজা! যখন যেটা আবিষ্কার হবে, সেটা কেড়ে নিয়ে আউট অব কন্টেক্সট কোরানে বসিয়ে দিয়ে "১৪০০ বছর আগে কোরানেই এ কথা বলা ছিলো" বলে ছাগুসুলভ লাফালাফি করে তারা। আল্লাহ তো আপনাদের মতো অর্বাচীন, তাই সুরা আন-নাজসে কিয়ামত নিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাৎ সেক্স নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন