মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

নিমো হুজুরের খুতবা - ৪৪

লিখেছেন নীল নিমো

১.
আপনাদের জন্য মারাত্মক খুশির খবর আছে। খবরে প্রকাশ, জনসংখ্যার দিক দিয়ে ২০৭০ সালের ভিতরে ইসলাম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মে পরিণত হবে। তার মানে, ২০৭০ সালের ভেতরে মুসলমানরা খ্রিষ্টানদের পিছনে ফেলে দেবে। পৃথিবীতে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাই আনন্দে আমি উচ্চস্বরে তাকবীর দিলাম:
- নাড়াদে তাকবীর, আল্লাহু আকবর... নাড়াদে তাকবীর, আল্লাহু আকবর...

যথারীতি এক নাস্তিক আমার তাকবীরে বাধা দিয়ে জিজ্ঞাস করিল:
- হুজুর, নবীজি বলেছিলেন, কেয়ামত অতি সন্নিকটে। কেয়ামতের আলামতগুলো কী?

প্রশ্ন কমন পড়ে গেছে, তাই নাস্তিককে খুশি মনে জ্ঞান দান করিলাম:
- কেয়ামতের আলামত গুলো হলো:
মানুষদের মায়া মমতা ও লজ্জাশীলতা কমে যাবে।
বড়কে সম্মান করবে না। ছোটকে স্নেহ করবে না।
সমাজে ফ্যাসাদ দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
অযোগ্য ও অসৎ ব্যক্তিরা সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতা নির্বাচিত হবে।
নানান প্রকার রোগব্যাধির আবির্ভাব ঘটবে।
দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হবে।
অত্যাচার ও অবিচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
অন্যায় কাজকে বাহাদুরি মনে করা হবে।

নাস্তিক বলিল:
- হুজুর, তার মানে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীতে অপকর্ম অনাচার বেড়ে যাবে। আর পৃথিবীতে যখন অপকর্ম অনাচার বেড়ে যাবে, তখনই কেয়ামত হবে। ইসলাম যে পৃথিবীতে অশান্তি কায়েম করবে, এইটা ইসলামেই বলা আছে, ঠিক কি না?

নাস্তিকের কথা শুনে তব্দা খাইলাম। জাহান্নামি নাস্তিক আমার পুরা আনন্দটাই মাটি করে দিল।

২.
আজকে পবিত্র কোরান মজিদ নিয়ে বয়ান দিচ্ছিলাম:
- কোরান নাজিল শুরু হয়েছিল "পড়" শব্দটি দিয়ে। ইকরা বিসমিকাল্লাজী খালাক, পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন...

কথা শেষ করতে পারলাম না, এক নাস্তিক এসে ঈমানে ঝাকুনি দিল:
- হুজুর, প্রথম নাজিল হওয়া আয়াতটা বুঝলাম, কিন্তু নবীজির উপর নাজিলকৃত শেষ আয়াতটি কোনটি?

নাস্তিকের প্রশ্ন শুনে বুঝলাম, নাস্তিক ফিতনা লাগানোর ধান্দায় আছে। তাই আমি চালাকি করে পাল্টা প্রশ্ন করলাম:
- আপনিই উত্তর দিন, দেখি, ইসলাম সম্পর্কে আপনার জ্ঞান কতটুকু।

নাস্তিক হাসতে হাসতে দাঁত কেলিয়ে উত্তর দিল:
- হুজুর, শেষ নাজিলকৃত আয়াতটি নিয়ে ইসলামি স্কলারদের ভিতরে তীব্র মতভেদ আছে। সুরা বাকারার ২৮১ নং আয়াত, সুরা মায়দার ৩ নম্বর আয়াত, সুরা তওবার ১২৮ সহ আরো অনেক আয়াতকেই শেষ নাজিলকৃত আয়াত বলে দাবি করা হয়। প্রতিটি পরিপূর্ণ জিনিসের একটি নির্দিষ্ট শুরু এবং নির্দিষ্ট শেষ থাকে। কোরানের তা নাই। সুতরাং কোরান পরিপূর্ণ গ্রন্থ নয়, কোরানের ভিতরে ভেজাল আছে।

আমি বুঝতে পারলাম, নাস্তিকটা ইচ্ছা করেই ইসলামের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাগুলোর একটাতে আঘাত দিয়েছে। তাই আমি ওযু করার অযুহাত দেখিয়ে তাড়াতাড়ি করে স্থান ত্যাগ করলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন