সোমবার, ১ মে, ২০১৭

বিশ্বাসের দরজায় করাঘাত!: পর্ব ২০ – (মানুষ করলে হারাম! আল্লাহ করলে আরাম!)

 লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
বন্ধু আমার পানের দোকানদার! না-না এটি মমতাজের গান নয়, সত্যি গল্প! সারাদিন পান বিক্রি আর খাওয়াই তার কাজ। সহজ-সরল ধরনের প্রাথমিক পাশ ছেলে। ন্যাংটো কালে একসাথে নদীতে যতটা সাতার কেটেছি, সবটা যোগ দিলে সাত সমুদ্র পার হওয়ার চেয়ে কম হবে না নিশ্চয়! ছোটবেলা থেকে পিতাহীন আর আধপাগলী মায়ের কারণে লেখাপড়া হলো না তার। আমি যখন প্রাইমারী ছেড়ে হাইস্কুলে গেলাম, বন্ধু তখন পানের দোকান দিয়ে বসে গেলো বাজারের মাঝ বরাবর। ছেলেটার সব ভালো, তবে কথায়-কথায় বাবা-মায়ের নামে, ছেলে-মেয়ের নামে কসম কাটে! "আমার পোলার কসম, আমি এই কাজ করি নাই / মায়ের কসম, সালামের কাছে ৫০০ টাকা পাই আমি / মরা বাপের কসম, আমি সত্যি কইতাছি..."
শুক্রবারের ছুটির রাতে একসাথে আড্ডা চলছে, গোটাদশেক পরিচিত বন্ধু এবং এক সদ্য দাওরা হাদিস পাশের মাষ্টার্স আলেম হুজুর-কে নিয়ে! যথারীতি আমার পানের দোকানদার বন্ধু কথা বলার মধ্যে ৫/৭ বার কসম খেয়ে ভাত হজম করে ফেলেছে মাষ্টার্স আলেম হুজুরের! বুঝতে পারছিলাম, হুজুরের দুই খেজুর মাথায় উঠবে দ্রুত! আর হ্যাঁ, বলতে বলতেই শুরু: "শোনো বন্ধু, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করা মহাপাপ ও শিরক!
আল্লার নবী বলেছেন:
'যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল' [1]
আল্লার নবী বলেছেন:
 'সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহতাআলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে।' [2]
আল্লার নবী আরও বলেছেন:
 'যে আমানত বা গচ্ছিত দ্রব্যের নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়' [3]
সুতরাং আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের বরকত, তমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পীরের মর্যাদা, নেতা-নেত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথা-মুণ্ডু ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া হারাম, মহাপাপ ও শিরক!"

এবার আমার পালা: "বন্ধু, তুমি হাদীস দিয়া কইলা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করা মহাপাপ ও শিরক! বুঝলাম, কিন্তু হাদীসের কথা মানবো নাকি আল্লাহ কোরআনে যা করেছেন, তা মানবো? যদি কও হাদীস মানো, তবে কি কোরআন থেকে হাদীস বড়? আর আমরা কসম করলে হবে হারাম, আর আল্লাহ নিজে কসম করলে হবে আরাম! এ কেমন বিচার তোমাদের?" দাওরা হাদিস পাশের মাষ্টার্স আলেম হুজুর রীতিমত ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে উঠলো: "যেমন?"
আমি শুরু করলাম আবার: "কোরআনের আল্লাহ বহুবার ধুলো, মেঘ, নৌকা, পর্বত, আকাশ, বাতাস, সমুদ্র, সময়, ফেরেশতা, কলম, সকাল, বিকাল, রাত, চাঁদ, তারা, সূর্য, নক্ষত্র, ঘোড়া, ডুমুর, জয়তুন, শহরসহ ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে কসম করেছেন! কসম করা যদি শিরক হয়, তবে তো বড় শিরককারী আল্লাহ নিজেই! আর যদি আল্লাহ করলে শিরক না হয়, তবে আমরা করলে কসম হারাম, মহাপাপ, শিরক হবে কোন ‍যুক্তিতে! পারলে বোঝাও! উদাহরণ যদি দিতে চাই তবে আল্লার কসমের বিশাল তালিকা দিতে পারি, কিন্তু আপাতত দশটা কসমের লিষ্ট দিচ্ছি! সময় নিয়ে একদিন দেখা কইরো, বুঝাইয়া দিতে পারবো - আল্লাহ কতবড় কসমবাজ!
(আয-যারিয়াত ৫১:১-৪) কসম ধূলিঝড়ের, অতঃপর, পানির বোঝা বহনকারী মেঘমালার, অতঃপর মৃদুগতিতে চলমান নৌযানসমূহের, অতঃপর নির্দেশ বণ্টনকারী ফেরেশতাগণের
(আত্ব তূর ৫২: ১-৬) কসম তূর পর্বতের, আর কসম কিতাবের যা লিপিবদ্ধ আছে, উন্মুক্ত পাতায়। কসম বায়তুল-মামুর তথা আবাদ গৃহের, এবং সমুন্নত ছাদের, কসম তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ সাগরের,
(আন-নাজম ৫৩: ১) কসম নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায়।"
প্রিয় মুমিন ভাই-বোনেরা, কসম করা হয় দুই শ্রেণীর মনোবৃত্তি থেকে, দুর্বল/সরল অথবা ধুর্ত/ক্রিমিনাল; আমার পানের দোকানদার বন্ধুটি প্রথম শ্রেণীর, সে বিষয়ে, আশা করি, আপনাদেরও সন্দেহ নে,ই কিন্তু আপনাদের আল্লাহ কোন শ্রেণীর কসমবাজ? আর আপনি যদি দাওরা হাদিস পাশের মাষ্টার্স আলেম হুজুর-এর মত হাদীসের বাণীতে বিশ্বাস রাখেন, তবে আমাকে আবার বলতেই হবে, "তবে কি মানুষ কসম করলে হারাম! আল্লাহ করলে আরাম!"
তথ্যসূত্র

[1]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৪১৯।

[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৪০৭।

[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৪২০।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন