কৈশোরে একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় এক বয়স্ক ও বিশাল পণ্ডিত লোকের আবির্ভাব ঘটল। আমাকে বেশ তুচ্ছ করে জিজ্ঞেস করলেন, শোনলাম তুমি নাকি নাস্তিকতা করে বেড়াচ্ছ?
আমি বললাম, ঠিক তা না, কিছু প্রশ্নের উত্তর
খুঁজছি। সেটা যার সাথেই আলোচনা করি সে-ই বলে নাস্তিক।
- তুমি বাচ্চা ছেলে। আল্লাহকে তো বড় বড় জ্ঞানী-গুণীরাই বুঝে না। জ্ঞান কম থাকলে ইমান চলে যায় আর জ্ঞানের গভীরতা বাড়লে ইমানে বল আসে। তুমি মরিস বুকাইলির বই পড়েছ?
- বইটি পড়েছি, আমার জ্ঞান বাড়াতে আর কী করা দরকার?
- বেশি কিছু না। তোমার দেহের দিকে তাকাও। আল্লাহকে দেখতে পাবে।
- সেটা কী রকম?
- সুরা ত্বীনে আল্লাহ বলেছেন, লাক্বাদ খালাক্বনাল ইনসানা আহসানি তাক্বওয়িম। অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তমে অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। দেখো আমাদের কী সুন্দর চোখ, কী সুন্দর চেহারা!
- কিন্তু সংজ্ঞামতে আল্লাহ পার্ফেক্ট। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো খুঁত নাই। দেখেন আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গে সমস্যা রয়েছে, আপনি চোখে চশমা পরে রয়েছেন। এছাড়া চোখ ঠ্যারা হয়ে যায়, অন্ধ হয়ে যায়। এত প্রয়োজনীয় একটা অঙ্গ এত স্পর্শকাতর করে সৃষ্টি করতে হয়? আমাদের দেহে এমন কোনো অঙ্গ কি আছে যেখানে সমস্যা হয় না? আমার লিগাম্যান্ট হয়ে গেছে ঢিলা, এখন হাটতে হয় সমস্যা। পাকস্থলিতে হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিক আলসার, লিভার ড্যামেজ হয়ে যায়, কিডনি অকেজো হয়ে যায়, হার্ট এটাক হয়ে যায়। বিকলাঙ্গ, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়। এই গাছটার দিকে তাকিয়ে দেখেন, সোজা উপরের দিকে না বেড়ে হেলে গেছে, কখন জানি বাতাসে ভেঙ্গে পড়ে। তাহলে আল্লার সৃষ্টি কিভাবে পার্ফেক্ট হল?
- শোনো, তুমি আমার ছেলের চেয়েও কম বয়সী। এগুলোর মাধ্যমেও আল্লার প্রকাশ ঘটে, এগুলো তারই পরীক্ষা!
আমার রসিক বন্ধু ফিরোজ পাশে বসা ছিল। সে বললো, এই যে আঙ্কেল, একটু দাঁড়ান। আপনি তো আল্লাহর সৃষ্টিকে নিখুঁত বলে দাবি করে তার অস্তিত্ব
প্রমাণ করতে গেলেন। কিন্তু অস্তিত্ব তো প্রমাণ না হয়ে উল্টাটাই হচ্ছে। যার
অস্তিত্বই প্রমাণ হল না তার পরীক্ষা আপনি দিয়ে দিচ্ছেন। আপনি কি বুঝতে পারছেন আসলে
কী করছেন?
আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম।
------------------
আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গ কয়েক বিলিয়ন বছরের
বিবর্তনের ফসল। সবচেয়ে জটিল অঙ্গ বলে প্রচার করা হয় চোখকে। দেখেন কিভাবে
প্রাণিজগতে চোখের বিবর্তন ঘটল
রিচার্ড ডকিন্সের একটা সুন্দর ভিডিও আছে এ
ব্যাপারে। লিংক
এই হচ্ছে ব্যাপার। আসলে আল্লাহ কোনো কিছু করেছেন
বা প্রকৃতি জগতের কোনো ঘটনা ঘটিয়েছেন এ ধরণের ব্যাখ্যার কোনো মানে হয় না। যেমন আমি
যদি দাবি করি, আল্লাহ মিকাইল ফেরেসতার মাধ্যমে বৃষ্টি দিচ্ছেন তাহলে ‘খরা কেন হচ্ছে’ ‘মরুভূমিতে কেন
বৃষ্টি হয় না’ এসব প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয় এবং আল্লাহ দিয়ে
প্রকৃতির ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যা করলে সেটা হয়ে উঠে শুধুই বিনোদনদায়ী। আল্লাহ নদী
দিয়ে পানি বাহিত করে সাগরে নিয়ে যান – এরকম কথাবার্তা শুনতে যেমন হাস্যকর,
বাস্তবে তারচেয়ে আরো বেশি অকার্যকর এবং অপ্রয়োজনীয়।
প্রকৃতির যেসব ঘটনা আমরা এই মুহূর্তে ব্যাখ্যা
করতে পারব না সেগুলোর বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অপেক্ষা করব শুধু। আমরা যখন
পানিচক্রের ব্যাপারে জানতাম না তখন ধর্ম-প্রতারকদের থেকে শোনে বিশ্বাস করেছি সবই
আল্লাহর আদেশে মিকাইল ফেরেসতার কাজ-কারবার। এতে কী লাভটা হয়েছে?
আল্লাহ, খোদা, ভগবান এগুলো হচ্ছে শুধুই গুজব। আমরা
যদি প্রকৃতির কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা জানি না তবে সেটা সম্পর্কে বলা উচিত যে ‘আমরা তা জানি না’। এখানে আল্লাহ, খোদা, ভগবান নিয়ে আসার
কোনো মানে নেই, কোনো দরকার নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন