আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭

চিঠি হুমকি -৯: হুদাইবিয়ার আগে বনাম পরে - সময় অসঙ্গতি! কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৭০): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ –একশত চুয়াল্লিশ

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে) (ইন্টারন্যাল লিংকে যাতায়াতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে: সমাধানের চেষ্টা চলছে।)


"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চিঠি হুমকি-টি পাওয়ার পর রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন তা কী কারণে মুহাম্মদের আগ্রাসনে আক্রান্ত বানু কুরাইজা গোত্রের গোত্র নেতা কাব বিন আসাদের প্রতিক্রিয়ারই অনুরূপ তার আংশিক আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। এই পর্বের আলোচনা আগের পর্বেরই ধারাবাহিকতা।

(খন্দক যুদ্ধের পর, বানু কুরাইজা গণহত্যার সময় থেকে খায়বারের নৃশংসতা ও ফাদাক আগ্রাসন শেষে মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত [মার্চ, ৬২৭ - জুলাই, ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ] সময়ের ঘটনা ও সমসাময়িক পৃথিবীর ঐ অঞ্চলের দুই পরাক্রমশালী সম্রাট খসরু পারভেজ ও হিরাক্লিয়াসের আঠার বছর ব্যাপী রক্তক্ষয়ী হানাহানির ৬২৭ সাল - ৬২৮ সালের শেষ দৃশ্যপটের কালানুক্রমিক পর্যালোচনায় আমরা নিম্নবর্ণিত তথ্যগুলো খুঁজে পাই:) ----

৬২৮ সালের জানুয়ারি মাস (রমজান, হিজরি ৬ সাল):
বানু আল-মুসতালিক হামলার প্রায় এক মাস পর মুহাম্মদ তাঁর আল্লাহর নামে ওহী নাজিলের মাধ্যমে প্রিয় পত্নী 'আয়েশার ওপর অপবাদ আরোপ' বিষয়ক তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা সমাধান করেন (পর্ব-১০৪)!

৬২৮ সালের এপ্রিল-মে মাস (জিলকদ-যিলহজ, হিজরি ৬ সাল):
৬২৮ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে (জিলকদ, হিজরি ৬ সাল) মুহাম্মদ তাঁর দলবল নিয়ে যাত্রা করেন হুদাইবিয়া (পর্ব: ১১১-১২৯)কুরাইশদের সঙ্গে হুদাইাবিয়া সন্ধি-চুক্তি শেষে তিনি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন ৬২৮ সালের এপ্রিল-মে মাসে (জিলহজ, হিজরি ৬ সাল)।

৬২৮ সালের জুন মাস (মহরমের শেষার্ধ, হিজরি ৭ সাল):
মুহাম্মদের "সুস্পষ্ট বিজয় (পর্ব-১২৩)" প্রতিজ্ঞা পালনের মিশন, শুধু তাঁর সঙ্গে হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের পুরস্কৃত করতে নৃশংস আগ্রাসী খায়বার আক্রমণ, লুটের মাল ও যৌন-দাসী ভাগাভাগি (পর্ব: ১৩০-১৫২) ও ফাদাক আগ্রাসন (পর্ব: ১৫৩-১৫৮)!
৬২৮ সালের জুলাই মাস (সফর, হিজরি ৭ সাল):
মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা খায়বার, ফাদাক ও ওয়াদি আল-কুরা আগ্রাসন (পর্ব-১৫৯) শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন । 


>>> আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকরা আল-মুকাওকিসের কাছে মুহাম্মদের চিঠি পাঠানোর যে তারিখটি লিপিবদ্ধ করেছেন (এপ্রিল-মে, ৬২৮ সাল) তা কী কারণে আয়েশার প্রতি মুখ্য অপবাদকারী হাসান বিন থাবিত-কে মুহাম্মদ প্রদত্ত 'শিরিন’ নামের যৌন-দাসী প্রদানের তারিখ-টির সঙ্গে একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তার আংশিক আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। একইভাবে পারস্যের সম্রাট খসরু পারভেজ ও আবিসিনিয়ার শাসক আল-নাদজাসির কছে মুহাম্মদের চিঠি-হুমকির বর্ণিত সময়কাল, তাঁদেরই বর্ণিত ঘটনা প্রবাহের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা ও সমসাময়িক ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। 

"কেন তা অসঙ্গতিপূর্ণ? এমন কী কোন পন্থা আছে যার মাধ্যমে মুহাম্মদের এই চিঠি-হুমকির সম্ভাব্য সঠিক সময়কাল নির্ধারণ করা যায়?"

আলেকজান্দ্রিয়ার শাসনকর্তা আল-মুকাওকিসের কাছে চিঠি-হুমকি:
আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় যা বর্ণিত হয়েছে তা হলো, সাফওয়ান বিন আল-মুয়াত্তালের সঙ্গে আয়েশার ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ ঘটনায় মুহাম্মদ তাঁর আল্লাহর নামে ওহী নাজিল করে আয়েশাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন; অতঃপর তিনি মুখ্য অপবাদ রটনাকারী মিসতাহ বিন উথাথা (আবু-বকরের খালাতো ভাই, আয়েশার চাচা), হাসান বিন থাবিত (মুহাম্মদের সবচেয়ে প্রিয় অনুসারীদের একজন) ও হামনা বিনতে জাহাশ (মুহাম্মদের ফুফাতো বোন)-কে ৮০টি করে বেত্রাঘাত করার আদেশ জারী করেন। সাফওয়ান যখন জানতে পারেন যে হাসান বিন থাবিত তাঁকে ও আয়েশা-কে নিয়ে অপবাদ রটনা করেছিলেন, তখন তিনি তরবারি হাতে একদা হাসানের সম্মুখীন হোন ও তার সেই তরবারি দিয়ে তাকে আঘাত করেন। এই ঘটনাটি যখন মুহাম্মদ-কে অবহিত করানো হয়, তখন মুহাম্মদ হাসান ও সাফওয়ান-কে তাঁর কাছে ডেকে পাঠান; অতঃপর তিনি ক্ষতিপূরণ বাবদ হাসান-কে এক খণ্ড জমি ও মিশরের শাসনকর্তা আল-মুকাওকিসের কাছ থেকে উপঢৌকন প্রাপ্ত 'শিরিন' নামের এক যৌন-দাসী প্রদান করেন। হাসানের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনায় হাসান-কে খুশী করার নিমিত্তেই 'আয়েশা-সাফওয়ান' অপবাদ রটনার সময়টিতেই’ মুহাম্মদ হাসান-কে যে এই জমি ও যৌন-দাসী প্রদান করেছিলেন, তা আদি উৎসের বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট (পর্ব-১০৭)। এই ঘটনার তিন মাস পর মুহাম্মদের হুদাইবিয়া-চুক্তি, অতঃপর খায়বার, ফাদাক  ও ওয়াদি আল-কুরা আগ্রাসন শেষে তাঁর  মদিনা প্রত্যাবর্তন ছিল এই ঘটনার ছয় মাস পরে। ঘটনার ছয় মাস পর মুহাম্মদ হাসান-কে জমি ও যৌন-দাসী প্রদানে পুরস্কৃত করেছিলেন, এমন ইতিহাস আদি উৎসের কোথাও বর্ণিত হয় নাই।
যেহেতু আয়েশার প্রতি অপবাদ আরোপ ঘটনা-টি নিষ্পত্তির সময় (জানুয়ারি, ৬২৮ সাল) আল-মুকাওকিসের পাঠানো উপঢৌকন-টি মুহাম্মদের কাছে মজুদ ছিল, তার কাছে মুহাম্মদের চিঠি লেখার সময়কাল ছিলো এই ঘটনার বেশ কিছু সময় পূর্বে।

কত সময় পূর্বে?
আদি উৎসের বর্ণনায় যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি তা হলো, মুহাম্মদ তাঁর মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে আল-মুকাওকিসের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। অতঃপর সেই চিঠি-টি তিনি পত্রবাহক মারফত মদিনা থেকে মিশরে আল-মুকাওকিসের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সে আমলে না ছিলো উড়োজাহাজ, না ছিলো ট্রেন, বাস, স্টিমার কিংবা লঞ্চ। সে কালের সড়ক ব্যবস্থা আজকের তুলনায় নিশ্চিতরূপেই ভাল ছিলো না। আধুনিক যুগের GPS  Google map এর মাধ্যমে আজ আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, স্থলপথে মদিনা থেকে মিশরের দূরত্ব হলো প্রায় ১০২৫ মাইল। আধুনিক যোগাযোগের সুবিধা বঞ্চিত অবস্থায় সেই আমলে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার প্রধান মাধ্যম ছিল পদব্রজে (পায়ে হেঁটে) অথবা উটের পিঠে যাত্রা। ধরে নেয়া যাক, পত্রবাহক তার যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে সর্বক্ষণই এই দু'টি মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন।

পিঠে কোন ভারী বোঝা না নিয়ে একটা উট খাদ্য-পানীয় ও বিশ্রাম শেষে প্রতি দিনে সর্বোচ্চ ৩০মাইল পথ (প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩ মাইল বেগে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা যাত্রা) পাড়ি দিতে পারে বলে জানা যায়, যা একজন মানুষের পদব্রজে যাত্রাকালের সমপরিমাণ। পিঠে ভারী বোঝা বহনকারী কাফেলা (Caravan) উটের গতি প্রতিদিনে ১৮-২৫মাইলের বেশী নয়। যাত্রা পথে কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ না করে, প্রতি দিন ৩০ মাইল বেগে মদিনা থেকে মিশরের এই দূরত্ব পাড়ি দিতে পত্রবাহকের সময় লাগবে কমপক্ষে ৩৫দিন ও সেখান থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের জন্য আরও ৩৫ দিন = মোট ৭০ দিন (প্রায় আড়াই মাস)! পত্রবাহক মদিনা থেকে মিশর যাত্রা ও প্রত্যাবর্তন পথের এই ৭০ দিন সময়ে কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ করেন নাই, এবং/অথবা আল-মুকাওকিস মুহাম্মদের চিঠি পাওয়ার সময় থেকে পত্রবাহক-কে উপঢৌকন সহ মদিনা রওনা করানোর পূর্ব পর্যন্ত কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ করেন নাই, এমন প্রস্তাব অবাস্তবতারা যে সম্ভাব্য অতিরিক্ত সময়টুকু ক্ষেপণ করেছিলেন, সেই সময়টুকু এই ৭০ দিন সময়ের সাথে যুক্ত করে আমরা মুহাম্মদের এই চিঠি প্রক্রিয়ার ‘মোট সময়' নির্ধারণ করতে পারি। ধারণা করা কঠিন নয়, তা হতে পারে কমপক্ষে তিন মাস। 
অর্থাৎ, মুহাম্মদ আল-মুকাওকিসের কাছে যে চিঠিটি লিখেছিলেন তা ছিলো আয়েশার প্রতি অপবাদ আরোপ নিষ্পত্তি ঘটনার (জানুয়ারি, ৬২৮ সাল) কমপক্ষে তিন মাস ও হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তি সময়ের (এপ্রিল-মে, ৬২৮ সাল) কমপক্ষে ছয় মাস পূর্বে!

পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজের কাছে চিঠি-হুমকি:
আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকরা পারস্য সম্রাট খসরুর কাছে মুহাম্মদের চিঠি পাঠানোর যে সময়কাল লিপিবদ্ধ করেছেন (এপ্রিল-মে, ৬২৮ সাল), তা সম্রাট খসরু পারভেজ ও হিরাক্লিয়াসের বহু বছর ব্যাপী রক্তক্ষয়ী হানাহানির ৬২৭ খ্রিস্টাব্দ - ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের শেষ দৃশ্যপটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়! কারণ, “সম্রাট হিরাক্লিয়াস কর্তৃক দাস্তাগার্ড দখল হওয়ার পর, ৬২৮ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় খসরু পুত্র দ্বিতীয় কাবাদ তার পিতাকে বন্দি করেন ও নিজেকে সাসানিদ সাম্রাজ্যের পরবর্তী শাসক হিসাবে ঘোষণা দেন। এই ঘটনার তিন দিন পর কাবাদ তার পিতাকে হত্যা করে (১৬৪)।"

যেহেতু হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তি সময়ের (এপ্রিল-মে, ৬২৮ সাল) দুই-তিন মাস আগেই (ফেব্রুয়ারি, ৬২৮ সাল) খসরু পারভেজ খুন হয়েছিলেন, সেহেতু হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তির পর মৃত খসরু পারভেজ-কে মুহাম্মদের চিঠি পাঠানোর কোন প্রশ্নই আসে না! সুতরাং, যৌক্তিকভাবেই যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা হলো: পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজের কাছে মুহাম্মদ যে চিঠি-হুমকিটি পাঠিয়েছিলেন, তা ছিলো হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তির বেশ কিছু সময় পূর্বে।

কত সময় পূর্বে?
ঠিক কত সময় পূর্বে তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব না হলেও আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনার আলোকে (পর্ব-১৬৩) এ বিষয়ের কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বর্ণিত হয়েছে:

>> “মুহাম্মদ তাঁর মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে পারস্যের (ইরান) শাসনকর্তা খসরু পারভেজের কাছে চিঠি লেখেন, অতঃপর সেই চিঠিটি মদিনা থেকে ইরানে খসরু পারভেজের কাছে পোঁছানো হয়।
মদিনা থেকে ইরানের স্থলপথে যাত্রার দূরত্ব হলো প্রায় ১৩৭০ মাইলযাত্রা পথে কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ না করে প্রতি দিন ৩০ মাইল বেগে মদিনা থেকে ইরানের এই দূরত্ব পাড়ি দিতে পত্রবাহকের সময় লাগবে কমপক্ষে ৪৬ দিন।
>> “সেই চিঠিটি পাওয়ার পর খসরু পারভেজ তা ছিঁড়ে ফেলেন ও ইয়ামেনের গভর্নর বাধানের কাছে মুহাম্মদ-কে ধরে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে চিঠি লেখেন, চিঠিটি ইরান থেকে ইয়ামেনের গভর্নর কাছে পৌঁছানো হয়।”
ইরান থেকে ইয়েমেনের স্থলপথে দূরত্ব হলো ১২১০ মাইল। যাত্রা পথে কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ না করে প্রতি দিন ৩০ মাইল বেগে ইরান থেকে ইয়েমেনের এই দূরত্ব পাড়ি দিতে পত্রবাহকের সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ৪১ দিন

>> “অতঃপর গভর্নর বাধান তার লোককে মুহাম্মদের কাছে ইয়ামেন থেকে মদিনায় মুহাম্মদের কাছে পাঠান।”
ইয়েমেন থেকে মদিনার স্থলপথে দূরত্ব হলো প্রায় ৮৭০ মাইলকোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ না করে প্রতি দিন ঐ বেগে ইয়েমেন থেকে মদিনার এই পথ পাড়ি দিতে তাদের সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ২৯ দিন।
>> “তারা সেখানে পৌঁছার পর মুহাম্মদ তাদের-কে জানান যে খসরু পারভেজ-কে খুন করা হয়েছে, যা মুহাম্মদ অলৌকিকভাবে জানতে পেরেছেন!”

মুহাম্মদের যাবতীয় অলৌকিকত্বের কিসসা যে মুহাম্মদ পরবর্তী সময়ের নিবেদিতপ্রান অনুসারীদের অতি উর্বর মস্তিষ্কের ফসল, তার উজ্জ্বল সাক্ষী হলো মুহাম্মদ নিজেই (কুরান)। এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা 'মুহাম্মদের মোজেজা তত্ত্ব (পর্ব: ২৩-২৫)' পর্বে করা হয়েছে। সুতরাং যা বাস্তব তা হলো, কোন না কোন 'লৌকিক-ভাবেই' মুহাম্মদ খসরু পারভেজের খুন হওয়ার সংবাদটি জেনেছিলেন! সেই সময়ের ইতিহাসের পর্যালোচনায় জানা যায়, খসরু পারভেজ খুন হয়েছিলেন ৬২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোন এক সময়ে (সঠিক তারিখ অজ্ঞাত)। খসরু পারভেজের খুন হওয়ার ঐ দিনেই যদি মুহাম্মদের কোন গুপ্তচর ইরান থেকে মদিনায় এই খবর-টি পৌঁছে দেয়ার জন্য রওনা হোন, তবে মদিনা থেকে ইরানের এই ১৩৭০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে খবরটি মুহাম্মদের কাছে পৌঁছে দিতে তার সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ৪৬ দিন।
মোট সময় = (৪৬+৪১+২৯+৪৬ দিন) = কমপক্ষে ১৬২ দিন (প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস)!

সংবাদবাহক মদিনা থেকে ইরান, ইরান থেকে ইয়েমেন, ইয়েমেন থেকে মদিনা ও ইরান থেকে মদিনা যাত্রা পথের এই ১৬২ দিন সময়ে, খসরু পারভেজ মুহাম্মদের চিঠি পাওয়ার পর ইয়ামনের গভর্নর বাধানের কাছে চিঠি পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত খসরু পারভেজের চিঠি পাওয়ার পর ইয়ামেনের গভর্নর তার লোকদের মদিনায় মুহাম্মদের কাছে পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কোনরূপ অতিরিক্ত কাল ক্ষেপণ করেন নাই, এমন প্রস্তাব একেবারেই অবাস্তব। তারা যে সম্ভাব্য অতিরিক্ত সময়টুকু ক্ষেপণ করেছিলেন, তা এই সময়ের সাথে যুক্ত করে আমরা খসরু পারভেজের কাছে মুহাম্মদের এই চিঠি প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য ‘মোট সময়' নির্ধারণ করতে পারি। যৌক্তিকভাবেই তা তা হতে পারে কমপক্ষে সাত মাস।
অর্থাৎ, খসরু পারভেজের কাছে মুহাম্মদ যে চিঠিটি লিখেছিলেন তা ছিলো খসরু পারভেজের খুন হওয়ার (ফেব্রুয়ারি, ৬২৮ সাল) কমপক্ষে সাত মাস হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তি সময়ের (এপ্রিল-মে, ৬২৮ সাল) কমপক্ষে নয় -দশ মাস পূর্বে

আদি উৎসের বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, মুহাম্মদের চিঠি হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আবিসিনিয়ার শাসনকর্তা আল-নাদজাসি দু'টি জাহাজ যোগে মুহাম্মদের বেশ কিছু অনুসারীকে মদিনায় ফেরত পাঠান। এই সেই মুহাম্মদ অনুসারীরা যারা মুহাম্মদের আদেশে একদা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন (পর্ব-৪১)। এই অনুসারীদের মধ্যে ছিলেন মুহাম্মদের চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু-তালিব। আল-ওয়াকিদি বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, খায়বার বিজয়ের ঐ সময়টিতে জাফর খায়বারে এসে মুহাম্মদের সঙ্গে মিলিত হোন।

আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বর্ণনা: [1]

‘তারা বলেছেন: খায়বার বিজয়ের অল্প সময় পরে আল-নাদজাসির কাছ থেকে দু'টি জাহাজ যোগে লোকেরা এসে পৌঁছে। যখন আল্লাহর নবী জাফর-কে দেখতে পান, তিনি বলেন, "যখন আমি জাফর-কে দেখতে পাই, আমি বুঝতে পারি না এ দু'টির কোনটি-তে আমার খুশী হওয়া উচিত; জাফরের প্রত্যাবর্তন, নাকি খায়বার বিজয়।" অতঃপর, আল্লাহর নবী তাকে আলিঙ্গন করেন ও তার দুই চোখের মাঝখানে চুম্বন করেন।'-- [2]

(‘They said: People from two ships arrived from the Negus soon after Khaybar was conquered. When the Prophet saw Ja‛far he said, “When I saw Ja‛far I did not know which of the two I should be happy about, the arrival of Ja‛far or the conquest of Khaybar.” Then the Messenger of God embraced him and kissed him between his eyes.’)

আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকরা আবিসিনিয়ার শাসনকর্তা আল-নাদজাসির কাছে মুহাম্মদের চিঠি পাঠানোর যে সময়কাল লিপিবদ্ধ করেছেন (এপ্রিল-মে, ৬২৮ সাল), তা ওপরে বর্ণিত বর্ণনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, মদিনা থেকে আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) স্থলপথের দূরত্ব হলো প্রায় ৩০০০ মাইলযাত্রা পথে কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ না করে প্রতি দিন ৩০ মাইল বেগে মদিনা থেকে আবিসিনিয়ার এই দূরত্ব পাড়ি দিতে পত্রবাহকের সময় লাগবে কমপক্ষে ১০০ দিন ও সেখান থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের জন্য আরও ১০০ দিন = মোট ২০০ দিন (প্রায় সাত মাস)!  পত্রবাহক এই ৬০০০ মাইল পথ পরিক্রমায় কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ করেন নাই, আল-নাদজাসি মুহাম্মদের চিঠি পাওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে মুহাম্মদ অনুসারীদের মদিনা প্রত্যাবর্তনের সাজ-সরঞ্জাম আয়োজন সমাপ্ত করতে কোনরূপ অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ করেন নাই, এমন প্রস্তাব অবাস্তব। তারা যে সম্ভাব্য অতিরিক্ত সময়টুকু ক্ষেপণ করেছিলেন, তা এই সময়ের সাথে যুক্ত হবে। যৌক্তিকভাবেই তা হতে পারে কমপক্ষে আট মাসের অধিক।
অর্থাৎ, আল-নাদজাসির কাছে মুহাম্মদ যে চিঠিটি লিখেছিলেন তা ছিলো মুহাম্মদের খায়বার বিজয়ের (জুন-জুলাই, ৬২৮ সাল) কমপক্ষে আট মাস হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তি সময়ের (এপ্রিল-মে, ৬২৮ সাল) কমপক্ষে ছয় মাস পূর্বে
>> 'বশ্যতা স্বীকার' করার আহ্বান সম্বলিত কোন চিঠি হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তি কীরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন তা বহুলাংশেই নির্ভর করে আহ্বানকারীর অতীত কর্ম-কাণ্ডের বিষয়ে ঐ ব্যক্তি কীরূপ ধারণা পোষণ করেন, আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়ায় তিনি কী পরিমাণ লাভবান হবেন, আর সাড়া না দিলে তিনি কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন - ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐ ব্যক্তিটির বিশ্বাস ও বিবেচনার ওপর। সে কারণেই আহ্বানকারীর কর্মকাণ্ডের অতীত ইতিহাস ও পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই মুহাম্মদের চিঠি-হুমকি গুলো কখন কোন শাসকের কাছে গিয়ে পৌঁছেছিল, তার ইতিবৃত্তের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখ ধারণা না থাকলে বিভিন্ন শাসকের কাছে মুহাম্মদের এ সকল চিঠি-হুমকির প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। 
আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট তা হলো, মুহাম্মদের শক্তি বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী নৃশংসতার ভয়ে ভীত হয়েই অধিকাংশ অবিশ্বাসী তাঁর বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সংঘটিত বানু কুরাইজা গণহত্যা’, বানু আল-মুসতালিক, খায়বার ও ফাদাক আগ্রাসন সম্পন্ন করার পরে প্রাপ্ত কোন চিঠি-হুমকির প্রতিক্রিয়া, এই সব আগ্রাসনের আগে প্রাপ্ত চিঠি-হুমকির প্রতিক্রিয়ার চেয়ে ভিন্নরূপ হতে বাধ্য। বাস্তবে হয়েছিলো ও তাই! বানু কুরাইজা গণহত্যার পূর্বে মুহাম্মদের অনুসারীর সংখ্যা যা ছিলো, এই গণহত্যার পর তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে, খায়বারের অমানুষিক নৃশংসতা ও ফাদাক আগ্রাসনের পর তা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় (বিস্তারিত:'আল ফাতহ' বনাম আঠারটি হামলা [পর্ব-১২৪])!
আদি উৎসের বর্ণনায় যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি তা হলো, সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতিক্রিয়া, মুহাম্মদের চিঠি হুমকি প্রাপ্ত অন্যান্য শাসকদের প্রতিক্রিয়ার তুলনায় ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, এ কারণে যে হিরাক্লিয়াস যে কোন উপায়ে মুহাম্মদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়ার পক্ষে ছিলেন ভীষণ সোচ্চার (পর্ব-১৬৮)! অন্যদিকে, আল-মুকাওকিসের প্রতিক্রিয়া ছিল মুহাম্মদের কাছে উপঢৌকন প্রেরণ (পর্ব-১৬১), খসরু পারভেজের প্রতিক্রিয়া ছিল রাগান্বিত ও অস্বীকার (পর্ব-১৬২), আর আল-নাদজাসির প্রতিক্রিয়া ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ ও সাহায্যকারী!
কী কারণে তাদের প্রতিক্রিয়ার এই ভিন্নতা, তার সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই যে আল-মুকাওকিস, খসরু পারভেজ ও আল-নাদজাসির কাছে মুহাম্মদের চিঠি হুমকির যে সময়কাল তাঁরা উদ্ধৃত করেছেন, তাঁদেরই বর্ণিত মুহাম্মদের জীবন ইতিহাসের ('সিরাত') পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় তার সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ! তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনার গভীর বিশ্লেষণে (In depth analysis) স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে তাদের কাছে প্রেরিত মুহাম্মদের চিঠি-হুমকির সময়কাল ছিলো হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তির অনেক পূর্বে। তা ছিলো: “বানু কুরাইজা গনহত্যার পরে ও বানু আল-মুসতালিক আগ্রাসনের পূর্বে!”
সে কারণেই,
তাদের পক্ষে মুহাম্মদের 'বনি-কুরাইজা গণহত্যার' পরে সংঘটিত বানু আল-মুসতালিক, বানু ফাযারাহ [পর্ব-১১০], খায়বার, ফাদাক - ইত্যাদি আগ্রাসন ও নৃশংসতার ইতিবৃত্ত জানার সুযোগ ছিলো না। যদি তারা এই চিঠিগুলো 'বনি-কুরাইজা গণহত্যার' পরের এ সকল আগ্রাসনের ইতিবৃত্ত মুহাম্মদের শক্তিমত্তার সর্বশেষ পরিচয় পাওয়ার পর প্রাপ্ত হতেন, তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হতো তা জানা কখনোই সম্ভব নয়! কিন্তু যৌক্তিকভাবেই তা ভিন্নধর্মী না হওয়াটাই হতো অস্বাভাবিক।

অন্যদিকে,
সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে মুহাম্মদের চিঠি হুমকি পাঠানোর সময় ও তার প্রতিক্রিয়ার সময়কাল ছিলো অনেক পরে। অন্যান্য শাসকদের তুলনায় হিরাক্লিয়াসের প্রতিক্রিয়া কী কারণে ভিন্নতর, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এই সময়কালের ধারণার মধ্যেই। এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা আগামী পর্বে করা হবে।

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৮৩; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৩৬ http://www.amazon.com/The-Life-Muhammad-Al-Waqidis-al-Maghazi/dp/0415864852#reader_0415864852

[2] “সিরাত রসুল আল্লাহ” - লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫৫৬ বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:


২টি মন্তব্য:

  1. ওহ! আবার নিয়মিত কলামগুলো ফিরে পেলাম। খুব ভাল লাগছে। ধর্মকারী প্রতিদিন পাঠ না করলে দিনটা বৃথা গেল মনে হয়। প্লিজ আপনারা অনিয়মিত হয়ে যাবেন না।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধর্মকারী চলছে চলবে!
      হয়ত অাপাতত গতি কিছুটা ধীর;
      কিন্তু থামবে না অবশ্যই!

      মুছুন