লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
মুহাম্মদের
জীবন ইতিহাস বড় বিচিত্র! যা আমরা সত্য বলে জানি তার বেশীরভাগই সত্য নয়, আর যা আমরা
মিথ্যা বলে জানি তার সবটাই মিথ্যা নয়! একথা আমার একার নয়, ইসলামের ইতিহাসবিদগন বহু
বিষয়ে এখনও দ্বিধায় ভোগেন এবং মুহাম্মদের নামে প্রচলিত বেশীরভাগ মিথকে সূত্রহীন গল্প
বলে খারিজ/বাতিল করেন। আজ মুহাম্মদকে আমরা যতটা জানি তার পেছনে ৫ জন মানুষের পরিশ্রমে
লেখা নবী জীবনী (সিরাত) মূল সূত্র হিসাবে
কাজ করে; এদের মধ্যে ৪ জনের নাম ‘মুহাম্মদ’ এবং
একজনের নাম ‘মামর’।
এছাড়া কোরআন ও হাদীস সংকলনগুলো নবী মুহাম্মদ জীবনের জিগ-স পাজল মাত্র, যা এই ৫ জনের
লেখার সত্যায়ন করে।
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক: মৃত্যু
১৫১ হিজরীতে।
মামর
ইবনে রাশিদ: মৃত্যু ১৫৩ হিজরীতে।
মুহাম্মদ
ইবনে ওমর (ওয়াকেদী): মৃত্যু ২০৭ হিজরীতে।
মুহাম্মদ ইবনে সাদ: মৃত্যু
২৩০ হিজরীতে।
মুহাম্মদ
ইবনে জারির আল তাবারি: মৃত্যু ৩১০ হিজরীতে।
তালিকার
প্রথম মুহাম্মদ
ও মামর ছিলেন সমসাময়িক এবং একই সূত্র থেকে
তারা নবী মুহাম্মদ জীবনের বেশীরভাগ অংশ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তাদের
দুজনের বর্ণনায় প্রবল ভিন্নতা পাঠককে দ্বিধায় ফেলতে বাধ্য! ৩৫০ হিজরীর পর থেকে আধুনিক
কাল পর্যন্ত এই ৫ জনের রচনা নিয়ে যেসকল ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচিত হয়েছে তাতে নবী মুহাম্মদের
নামে বর্ণনা হওয়া প্রায় ৫০ ভাগ অলৌকিক/মুজেজা ঘটনাকে সেফ্র সূত্রহীন বলে বাতিলের খাতায়
ফেলে দেওয়া হয়! আজ তা থেকে মাত্র দুটি বিষয়কে তুলে আনবো।
নবী
মুহাম্মদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীর রচয়িতা মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক
তার নিজের লেখাতেও অনেক বিষয়ে দুধরনের তথ্য প্রদান করে সিদ্ধান্ত নিতে অসমর্থ
হয়েছেন! খলিফা উমরের ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে তিনি ২ টি গল্প বলেছেন, একটি হচ্ছে: উমর মুহাম্মদকে হত্যা করতে উন্মুক্ত
তরবারী হাতে বের হয়ে পথেই জানতে পারেন তার বোন ফাতেমা আর বোন জামাই দুজনেই ইসলাম ধর্ম
গ্রহন করেছেন, তিনি সেখানে যান এবং ঘটনাক্রমে মন পরিবর্তন করে নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন
করেন; এই গল্পটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত। অপরটি
হচ্ছে: উমর একদিন রাতের বেলা কাবার গিলাফের আঁড়াল থেকে মুহাম্মদের কন্ঠে কোরআনের
আয়াত শুনে মন পরিবর্তন করেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক গল্প দুটি উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বিষয়টি
আল্লার উপর ছেড়ে দিয়েছেন! পরবর্তীতে ইবনে হিশাম এর আস-সীরাতুন নববিইয়াহ এর তাহকীক: মুছতফা সাক্বা ও অন্যান্যগণ (বৈরূত: দারুল
মারিফাহ, তাবি) এবং তাখরীজ: মাজদী ফাৎহী সাইয়িদ (তান্তা, কায়রো: দারুছ
ছাহাবা লিত তুরাছ, ১ম সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৫ খৃ.) এ বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ উমর-এর ফাতেমার
গৃহে প্রবেশ ও তার নিকট থেকে কুরআন শ্রবণ ও ইসলাম গ্রহণের বিষয়টির সনদ ‘যঈফ’ বলে গল্পটিকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে!
পাঠক ভেবে দেখুন: উমরের ইসলাম গ্রহনের যে গল্পটি সত্য বলে প্রায় প্রতিটি মুসলিম জানে তার কোনো
সঠিক ভিত্তি নেই!
ঠিক
একই সূত্রে বয়কট বাতিলের চুক্তিপত্র পোকায় খেয়ে নোবার গল্পটিকেও এখন আর সত্য বলে মেনে
নেন না ইসলাম গবেষকগন; এবং এটিকেও ‘যঈফ’
বলে বাতিলের খাতায় ফেলা দেওয়া হয়! মূলত কুরায়েশদের মধ্যে বয়কট নিয়ে অসন্তোষ দ্বিধা-বিভক্তিতে
প্রকাশ্য রূপ নেয়। যারা এই চুক্তিনামার বিরোধী ছিল, তারা ক্রমেই সংগঠিত হতে শুরু করে।
বনু আমের বিন লুওয়াই গোত্রের হেশামে ইবনে আমরের উদ্যোগে যোহায়ের ইবনে আবু উমাইয়া ও
মুতাইম ইবনে আদী সহ পাঁচজন নেতৃস্থানীয়
ব্যক্তি কাবার নিকটবর্তী ‘হাজূন’ নামক
স্থানে বসে এ ব্যাপারে একমত হন এবং তাঁদের পক্ষে যোহায়ের কাবাগৃহ তাওয়াফ শেষে সরাসরি
আবু জাহলের মুখের উপরে উক্ত চুক্তিনামাটি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন। সাথে সাথে বাকী চারজন
পরপর তাকে সমর্থন করেন। আবু জেহেল বলেন, বুঝেছি তোমরা রাতের বেলা অন্যত্র পরামর্শ করেই
এসেছ। ঐ সময়ে আবু তালিব কাবা চত্বরে এসে হাজির হন অতঃপর অঙ্গীকারনামাটি মুতাইম ইবনে আদী সর্বসমক্ষে ছিঁড়ে ফেলেন এবং এভাবেই ১০ম নবুয়তী বর্ষের
মুহাররম মাসে দুই অথবা তিন বছরের মাথায় সবসম্মতিক্রমে বয়কট চুক্তি বাতল করা হয়! বয়কট বাতিলের চুক্তিপত্র
পোকায় খেয়ে ফেলার ঘটনাটি মিথ মাত্র, আর ঘটনাটি যদি ঘটেও থাকে তা কাক-তাল, যা পরবর্তীতে
রং-রূপ দিয়ে আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে! তবু্ও ঘটনাটি যদি সত্যিই ঘটে
তবে তা কীভাবে তার ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবো এখন।
মুহাম্মদের
৩৪ বছর বয়স পর্যন্ত কাবা ছিলো সংযুক্ত ছবির প্রথম অংশের মত, স্থায়ী ছাদ ছিলো না, ছিলো
একাধিক দরজা এবং জানালা, দরজার প্রবেশপথ ছিলো মাটির সমান্তরাল! নিয়মিত চুরি এবং বৃষ্টিতে
ভিজতে হত এই ঘরটিকে, সাপও বাস করত ভেতরে! তখনকার কাবা ১৬ মিটার লম্বা এবং ৪.৫ মিটার
উচ্চতার একটি ঘর ছিলো! অবাধ যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত ছিলো কাবা। মুহাম্মদের ৩৫ বছর
সময়কালে বন্যা ও আগুনে ঘরটি ক্ষতিগ্রস্থ হবার কারণে একে পূণঃনির্মান করা হয়; অর্থাভাবে
১৬ মিটারের জায়গায় ১৩ মিটার করা হয় ঘরটিকে, অতিরিক্ত ৩ মিটার অংশটিকে একটি উপবৃত্তাকার
দেওয়াল দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়। চুরি ঠেকাতে কাবাকে ৪.৫ মিটার উচ্চতার বদলে ৯ মিটার
উচ্চতা দেওয়া হয় এবং করা হয় স্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা; মাটি থেকে কিছুটা উচ্চতায় তৈরি
করা হয় একটিমাত্র দরজা।
বয়কটকালীন
সময়ে কাবায় প্রবেশাধিকার মুসলিম ও হাশিম গ্রোত্রের জন্য নিষিদ্ধ থাকলেও বাদবাকী সবার
জন্যই তা উন্মুক্ত ছিলো, তিন বছরে কাবায় নিয়মিত ওকাজ/উকাজ মেলার জমায়েত, উমরা, পূঁজা-পাঠ
সবই চালু ছিলো। যদি বয়কট বাতিলের চুক্তিপত্র পোকায় খেয়েও থাকে তা জানা খুব একটা কঠিন
ছিলো না; মুতাইম
ইবনে আদী-র মুহাম্মদকে অন্ধ
সমর্থন এবং বয়কট বাতিল পরবর্তী ঘটনা প্রমান করে চুক্তিপত্রের পোকায় খাবার খবরটি তার
অথবা তার লোকজন দ্বারাই মুহাম্মদের কান পর্যন্ত পৌছায় এবং মুহাম্মদ তা তার চাচা আবু-তালিবকে
জানান! যেভাবেই ঘটনাটি ঘটুক অথবা না ঘটুক এর মধ্যে নূন্যতম অলৌকিক ঘটনা খোঁজার বিষয়টি
হাস্যকর!
নিশ্চিত
করে না বলতে পারলেও আমার ব্যক্তিগত অভিমত ১২১ নং প্রকাশকালীন সময়েই বয়কট শেষ হবার লক্ষন
পরিস্কার, এবং তার পরবর্তী দুইটি প্রকাশের প্রতিটি আয়াত তা অন্ধভাবে সমর্থন করে; এর
বেশী বিস্তারিত না বলি; গবেষক পাঠকদের জন্য তা খুঁজে দেখার সুযোগ রেখে দিলাম আজকে!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৩১ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার শেষ পর্ব। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজী অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
মুহাম্মদ দ্বারা ১২১ তম প্রকাশ: সূরা লোকমান (৩১) (একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি), ২৭ থেকে
২৯ বাদে ১২ থেকে ৩৪ আয়াত:
১২.
আমি লুকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম। (তাকে বলেছিলাম) যে, তুমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণেই করে। আর কেউ অকৃতজ্ঞ হলে (সে জেনে
রাখুক যে) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।
১৩.
স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশাচ্ছলে তার পুত্রকে বলেছিলঃ হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শরীক
করনা। নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে চরম যুলুম।
১৪.
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের
পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুবছরে, (নির্দেশ দিচ্ছি) যে,
আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (তোমাদের সকলের) প্রত্যাবর্তন তো আমারই
কাছে।
১৫.
তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার অংশীদার স্থির করার জন্য যার জ্ঞান তোমার
নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না। কিন্তু পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে।
যে আমার অভিমুখী হয় তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন
আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব তোমরা যা করছিলে।
১৬.
হে বৎস! কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় আর তা থাকে পাথরের ভিতরে অথবা আকাশে
অথবা যমীনের নীচে, আল্লাহ তাকে এনে হাজির করবেন। আল্লাহ সূক্ষ্ণদর্শী, সব কিছুর খবর
রাখেন।
১৭.
হে বৎস! তুমি নামায কায়িম কর, সৎ কাজের নির্দেশ দাও আর মন্দ কাজ হতে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে
ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ।
১৮.
অহংকারের বশবর্তী হয়ে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না, আর পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা কর না,
নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
১৯.
চলাফেরায় সংযত ভাব অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। স্বরের মধ্যে নিশ্চয়ই গাধার স্বর
সর্বাপেক্ষা শ্রুতিকটু।
২০. তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, যা কিছু আসমানসমূহে আর যমীনে আছে, আল্লাহ সমস্তই
তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামতসমূহ
পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? কতক মানুষ জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ সম্বন্ধে বাক-বিতন্ডা করে, তাদের
না আছে সঠিক পথের দিশা, আর না আছে কোন আলোপ্রদ কিতাব।
২১.
তাদেরকে যখন বলা হয়- আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা অনুসরণ কর, তখন তারা বলে- বরং আমরা
তারই অনুসরণ করব আমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে যে পথ অনুসরণ করতে দেখেছি। শয়তান যদি তাদেরকে
জ্বলন্ত আগুনের শাস্তির দিকে ডাকে, তবুও কি (তারা তারই অনুসরণ করবে)?
২২.
যে কেউ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে আর সে সৎকর্মশীল, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত
হাতল। যাবতীয় কর্ম পরিণাম ফলের জন্য আল্লাহর দিকে ফিরে যায়।
২৩.
কেউ কুফরী করলে তার কুফরী তোমাকে যেন মনোকষ্ট না দেয়, তাদের প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই;
অতঃপর আমি তাদেরকে জানিয়ে দেব তারা কী করত। (মানুষের) অন্তরসমূহে কী আছে সে সম্পর্কে
আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
২৪.
অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে ভোগ করতে দেব, অবশেষে তাদেরকে গুরুতর শাস্তিতে (প্রবেশ করতে)
বাধ্য করব।
২৫.
যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশমন্ডলী ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্য
অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। বল, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
২৬. আকাশমন্ডলী আর যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই, নিশ্চয়ই আল্লাহ,
তিনি সকল অভাব-মুক্ত, সকল প্রশংসার অধিকারী।
৩০. এসব প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ই সত্য এবং তাঁর পরিবর্তে তারা
যাকে ডাকে তা মিথ্যে। আল্লাহ, তিনি তো হলেন সর্বোচ্চ, সুমহান।
৩১.
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে যাতে তিনি
তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনের কিছু দেখাতে পারেন। এতে অবশ্যই প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ
ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে।
৩২.
ঢেউ যখন তাদেরকে (মেঘের) ছায়ার মত ঢেকে নেয়, তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর প্রতি
একনিষ্ঠ আনুগত্যে। অতঃপর আমি যখন তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে এনে দেই, তখন তাদের কতক
ন্যায়পূর্ণ আচরণ করে। কেবল মিথ্যাচারী অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার
করে।
৩৩.
হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর আর ভয় কর সে দিনের, যেদিন পিতা তার সন্তানের কোন
উপকার করতে পারবে না। সন্তানও পিতার কোনই উপকার করতে পারবে না। আল্লাহর ওয়াদা সত্য,
কাজেই পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে আর প্রধান প্রতারক
(শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ্ সম্পর্কে প্রতারিত না করে।
৩৪.
কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, জরায়ুতে কী আছে তা
তিনিই জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে, কেউ জানে না কোন্ জায়গায় সে মরবে।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বাধিক অবহিত।
মুহাম্মদ দ্বারা ১২২ তম প্রকাশ: সূরা ইব্রাহীম (১৪) (নবী ইব্রাহিম), ০১ থেকে
৪১ আয়াত:
১.
আলিফ-লাম- রা, একটা কিতাব যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানুষকে তাদের প্রতিপালকের
নির্দেশে অন্ধকার থেকে নিয়ে আসতে পার আলোর দিকে মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিতের পথে।
২.
আল্লাহ- আসমানসমূহে যা কিছু আছে আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর মালিকানাধীন। কিন্তু
কাফিরদের জন্য আছে কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ।
৩.
যারা আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জিন্দিগীকে শ্রেয় জ্ঞান করে, যারা আল্লাহর পথ থেকে (লোকদেরকে)
বিরত রাখে আর তাতে বক্রতা আনার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। এরা গোমরাহীতে বহু দূরে চলে গেছে।
৪. আমি কোন রসূলকেই তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাইনি যাতে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে
(আমার নির্দেশগুলো) বর্ণনা করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথহারা করেছেন, আর যাকে
ইচ্ছে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, তিনি বড়ই পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়।
৫.
আর অবশ্যই আমি মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহ দিয়ে পাঠিয়েছিলাম আর বলেছিলাম, তোমার জাতিকে
অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আন, আর তাদেরকে আল্লাহর হুকুমে ঘটিত অতীতের ঘটনাবলী দিয়ে
উপদেশ দাও। এতে প্রত্যেক পরম সহিষ্ণু ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অবশ্যই নিদর্শনসমূহ
রয়েছে।
৬.
স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের
কথা স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফিরআওনী গোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছিলেন যারা তোমাদেরকে
জঘন্য রকমের শাস্তিতে পিষ্ট করছিল। তোমাদের পুত্রদেরকে তারা হত্যা করত আর তোমাদের নারীদেরকে
জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে এক কঠিন পরীক্ষা।
৭.
স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তাহলে আমি
অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নিয়ামাত) বৃদ্ধি করে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে
জেনে রেখ, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন।
৮.
মূসা বলেছিল, তোমরা আর দুনিয়ার সকল লোক যদি অকৃতজ্ঞ হও (তাতে কিছুই যায় আসে না) কারণ
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।
৯.
তোমাদের পূর্বেকার লোকেদের খবর কি তোমাদের কাছে পৌঁছেনি? নূহ, ‘আদ আর সামূদ সম্প্রদায়ের,
আর তাদের পরবর্তীদের; তাদের সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। রসূলগণ তাদের কাছে স্পষ্ট
নিদর্শনাসমূহ নিয়ে এসেছিল, তখন তারা নিজেদের মুখে হাত চেপে ধরল আর বলল, ‘যে জিনিস দিয়ে
তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে তা আমরা অস্বীকার করি আর যে বিষয়ের প্রতি তোমরা আমাদেরকে আহবান
জানাচ্ছ সে সম্পর্কে আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে রয়েছি।’
১০.
তাদের রসূলগণ বলেছিল, ‘আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ? যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা,
তিনি তোমাদেরকে ডাকছেন তোমাদের অপরাধ মার্জনা করার জন্য আর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত
তোমাদেরকে অবকাশ দেয়ার জন্য।’ তারা বলল, ‘তুমি আমাদেরই মত মানুষ বৈ তো নও, আমাদের পূর্বপুরুষরা
যার ‘ইবাদাত করত তাত্থেকে আমাদেরকে তুমি বাধা দিতে চাও, তাহলে তুমি (তোমার দাবীর স্বপক্ষে)
আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত কর।
১১.
তাদের রসূলগণ তাদেরকে বলেছিল, ‘যদিও আমরা তোমাদের মতই মানুষ ব্যতীত নই, কিন্তু আল্লাহ
তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যার উপর ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর হুকুম ছাড়া তোমাদের কাছে
কোন প্রমাণ উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। মুমিনদের উচিত আল্লাহরই উপর ভরসা করা।
১২.
আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করব না কেন, তিনিই তো আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন, তোমরা আমাদেরকে
যে ক্লেশই দাওনা কেন, আমরা তাতে অবশ্য অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করব, আর ভরসাকারীদের আল্লাহরই
উপর ভরসা করা উচিত।
১৩.
কাফিরগণ তাদের রসূলদের বলেছিল, ‘আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্য অবশ্যই বের করে
দেব, অন্যথায় তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই আমাদের ধর্মমতে ফিরে আসতে হবে।’এমতাবস্থায় রসূলদের
প্রতি তাদের প্রতিপালক এ মর্মে ওয়াহী করলেন যে, ‘আমি যালিমদেরকে অবশ্য অবশ্যই ধ্বংস
করব।
১৪.
আর তাদের পরে তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই যমীনে পুনর্বাসিত করব। এ (শুভ) সংবাদ তাদের জন্য
যারা আমার সামনে এসে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভয় রাখে আর আমার শাস্তির ভয় দেখানোতে শংকিত
হয়।’
১৫.
তারা (অর্থাৎ কাফিররা) চূড়ান্ত বিজয়ের ফয়সালা কামনা করেছিল, কিন্তু (আল্লাহ ও তাঁর
রসূলদের বিরোধিতা করার কারণে) প্রত্যেক উদ্ধত সীমালঙ্ঘনকারী ব্যর্থ হয়ে গেল।
১৬.
এদের জন্য পরবর্তীতে আছে জাহান্নাম, আর এদেরকে পান করানো হবে গলিত পুঁজ।
১৭.
সে তা খুব কষ্ট করে গিলতে চেষ্টা করবে, আর খুব কমই গিলতে পারবে। মৃত্যু যন্ত্রণা তার
কাছে চতুর্দিক থেকে আসবে কিন্তু সে মরবে না, এরপর তার জন্য থাকবে এক কঠিন ‘আযাব।
১৮.
যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের
‘আমালের দৃষ্টান্ত হল সেই ছাইয়ের মত যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
নিজেদের উপার্জনের কিছুই তারা কাজে লাগাতে পারে না। এটাই ঘোর গুমরাহী।
১৯.
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ যথাযথ নিয়ম বিধানসহ আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তিনি
চাইলে তোমাদেরকে সরিয়ে দিবেন আর এক নতুন সৃষ্টি নিয়ে আসবেন।
২০.
এটা আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়।
২১.
তারা সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন যারা অহঙ্কার করেছিল তাদেরকে দুর্বলরা বলবে,
আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, কাজেই এখন আল্লাহর শাস্তির কোন কিছু আমাদের থেকে তোমরা
দূর করতে পার কি?’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ আমাদেরকে সত্যপথে পরিচালিত করলে আমরাও অবশ্যই
তোমাদেরকে সত্য পথ দেখাতাম। এখন আমরা ধৈর্যহারা হই কিংবা ধৈর্যধারণ করি দুটোই আমাদের
জন্য সমান, আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।’
২২.
বিচার-ফায়সালা সম্পন্ন হলে শয়তান বলবে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ওয়াদা করেছিলেন তা
ছিল সত্য ওয়াদা। আর আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তার খেলাপ করেছি, তোমাদের
উপর আমার কোনই প্রভাব ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান জানিয়েছিলাম আর তোমরা আমার
আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, বরং নিজেদেরকেই তিরস্কার
কর, এখানে না আমি তোমাদের ফরিয়াদ শুনতে পারি, না তোমরা আমার ফরিয়াদ শুনতে পার। ইতোপূর্বে
তোমরা যে আমাকে (আল্লাহর) শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি। যালিমদের জন্য আছে ভয়াবহ
শাস্তি।’
২৩.
যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা
প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরকাল থাকবে। সেখানে তাদেরকে
শান্তির বার্তা দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে।
২৪.
তুমি কি দেখ না কীভাবে আল্লাহ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন? উৎকৃষ্ট বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট
গাছের ন্যায় যার মূল সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত আর শাখা-প্রশাখা আকাশপানে বিস্তৃত।
২৫.
তার প্রতিপালকের হুকুমে তা সব সময় ফল দান করে। মানুষদের জন্য আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা
করেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।
২৬.
মন্দ বাক্য মন্দ বৃক্ষের সঙ্গে তুলনীয়, ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগেই যাকে মূল থেকে উপড়ে ফেলা
হয়েছে, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।
২৭.
যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণীর অবলম্বনে দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে
প্রতিষ্ঠিত রাখবেন আর যালিমদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন। তিনি যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।
২৮.
তুমি কি তাদের ব্যাপারে চিন্তা কর না যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বিনিময়ে অকৃতজ্ঞতার নীতি
অবলম্বন করে আর তাদের জাতিকে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে আনে।
২৯.
(তা হল) জাহান্নাম, তাতে তারা প্রবেশ করবে, বসবাসের এ জায়গা কতই না নিকৃষ্ট!
৩০.
আর তারা (অন্যকে) আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে তাঁর পথ থেকে বিপথগামী করার উদ্দেশে। বল,
‘ভোগ করে নাও, শেষ পর্যন্ত জাহান্নামেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।
৩১.
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে বল নামায প্রতিষ্ঠা করতে আর যে জীবিকা
আমি তাদেরকে দিয়েছি তাত্থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে- সেদিন আসার পূর্বে যেদিন
না চলবে কোন কেনা-বেচা আর না কোন বন্ধুত্ব।
৩২.
তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন
যা দিয়ে নানা প্রকার ফলফলাদি জন্মে তোমাদের জীবিকার জন্য। তিনি নৌযানগুলোকে তোমাদের
নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন, যাতে সেগুলো তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে চলাচল করে আর তিনি নদীগুলোকে
তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন।
৩৩.
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন, তারা অনুগত হয়ে নিজ পথে চলছে।
আর তিনি রাত ও দিনকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন।
৩৪.
তিনি তোমাদেরকে সে সব কিছুই দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছ (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই
পেয়েছ) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কক্ষনো তার সংখ্যা নির্ধারণ করতে
পারবে না। মানুষ অবশ্যই বড়ই যালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ।
৩৫.
স্মরণ কর, ইবরাহীম যখন বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি এ নগরীকে নিরাপদ কর আর আমাকে
আর আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে রক্ষে কর।
৩৬.
হে আমার প্রতিপালক! এ (প্রতিমা)-গুলো বহু সংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। কাজেই (প্রতিমাগুলোকে
বাদ দিয়ে) যারা আমাকে অনুসরণ করবে তারা আমার দলভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেক্ষেত্রে
তুমি তো বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।
৩৭.
হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার সন্তানদের একাংশকে শস্যক্ষেতহীন উপত্যকায় তোমার সম্মানিত
ঘরের নিকট পুনর্বাসিত করলাম। হে আমার প্রতিপালক! তারা যাতে নামায কায়িম করে। কাজেই
তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার
ব্যবস্থা কর যাতে তারা শুকরিয়া আদায় করে।
৩৮.
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো জান যা আমরা গোপন করি আর যা প্রকাশ করি, আসমান ও যমীনের
কোন বস্তুই আল্লাহ হতে গোপন নেই।
৩৯.
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমার বার্ধক্য অবস্থায় আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন,
আমার প্রতিপালক অবশ্যই আহবান শ্রবণকারী।
৪০.
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও আর আমার সন্তানদেরকেও, হে আমাদের
প্রতিপালক! তুমি আমার প্রার্থনা কবূল কর।
৪১.
হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে আর মুমিনদেরকে ক্ষমা
করে দিও।
মুহাম্মদ দ্বারা ১২৩ তম প্রকাশ: সূরা আশ্-শূরা (৪২) (পরামর্শ), ২৩, ২৪, ২৫ ২৭ বাদে ০১
থেকে ৫৩ আয়াত
১.
হা, মীম।
২.
আইন, সীন, কাফ।
৩.
পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ এভাবেই তোমার পূর্ববর্তীদের মতই তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ
করেন।
৪.
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। তিনি সমুন্নত, মহান।
৫.
আকাশমন্ডলী উর্ধ্বদেশ হতে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় এবং ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস
পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং মর্তবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রেখ, আল্লাহতো
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৬.
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি
রাখেন। তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও।
৭.
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় যাতে তুমি সতর্ক করতে
পার মক্কা এবং ওর চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে, যাতে
কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
৮.
আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই উম্মাত করতে পারতেন। বস্তুতঃ তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে স্বীয়
অনুগ্রহের অধিকারী করেন। যালিমদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই।
৯.
তারা কি আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ! অভিভাবকতো
তিনিই এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১০.
তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন, ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট। বলঃ তিনিই আল্লাহ! আমার
প্রতিপালক। আমি নির্ভর করি তাঁর উপর এবং আমি তাঁরই অভিমুখী!
১১.
তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি
করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের জোড়া; এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন; কোন কিছুই
তাঁর অনুরূপ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
১২.
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবি তাঁরই নিকট। তিনি যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন
অথবা সংকুচিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
১৩.
তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে। আর যা আমি
অহী করেছিলাম তোমাদের এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে,
তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওতে মতভেদ করনা। তুমি মুশরিকদেরকে যার প্রতি আহবান করছ
তা তাদের নিকট দুর্বহ মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তার
অভিমুখী হয় তাকে দীনের দিকে পরিচালিত করেন।
১৪.
তাদের নিকট জ্ঞান আসার পর শুধুমাত্র পারস্পরিক বিদ্বেষ বশতঃ তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ
ঘটায়। এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত অবকাশ সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের পূর্ব সিদ্ধান্ত
না থাকলে তাদের বিষয়ে ফাইসালা হয়ে যেত। তাদের পর যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছে তারা
কুরআন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে।
১৫.
সুতরাং তুমি ওর দিকে আহবান কর এবং ওতেই দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাক যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছ
এবং তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করনা। বলঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে বিশ্বাস
করি এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে। আল্লাহই আমাদের প্রতিপালক
এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। আমাদের কাজ আমাদের এবং তোমাদের কাজ তোমাদের। আমাদের এবং তোমাদের
মধ্যে বিবাদ নেই। আল্লাহই আমাদেরকে একত্রিত করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।
১৬.
আল্লাহকে স্বীকার করার পর যারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে তাদের যুক্তি-তর্ক তাদের
রবের দৃষ্টিতে অসার এবং তারা তাঁর ক্রোধের পাত্র এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
১৭.
আল্লাহই অবতীর্ণ করেছেন সত্যসহ কিতাব এবং তুলাদন্ড। তুমি কি জান, সম্ভবতঃ কিয়ামাত আসন্ন?
১৮.
যারা এটা বিশ্বাস করেনা তারাই এটা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা বিশ্বাসী তারা ওকে
ভয় করে এবং জানে যে, ওটা সত্য; জেনে রেখ, কিয়ামাত সম্পর্কে যারা বাক-বিতন্ডা করে তারা
ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে।
১৯.
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিযিক দান করেন। তিনি প্রবল
পরাক্রমশালী।
২০.
যে কেহ আখিরাতের প্রতিদান কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বর্ধিত করে দিই এবং
যে দুনিয়ার প্রতিদান কামনা করে আমি তাকে ওরই কিছু দিই। কিন্তু আখিরাতে তার জন্য কিছুই
থাকবেনা।
২১.
তাদের কি এমন কতকগুলি দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দীনের যার অনুমতি
আল্লাহ দেননি? ফাইসালার ঘোষণা না থাকলে, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েই যেত। নিশ্চয়ই যালিমদের
জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
২২. তুমি
যালিমদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত দেখবে তাদের কৃতকর্মের জন্য; আর এটাই আপতিত হবে তাদের উপর।
যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তারা থাকবে জান্নাতের মনোরম স্থানে। তারা যা কিছু চাবে
তাদের রবের নিকট তাই পাবে। এটাইতো মহা অনুগ্রহ।
২৬. তিনি
মুমিন ও সৎকর্মশীলদের আহবানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তার অনুগ্রহ বর্ধিত করেন; কাফিরদের
জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
২৮. তারা যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন
এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। তিনিই অভিভাবক, প্রশংসা।
২৯.
তাঁর অন্যতম নিদর্শন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীবজন্তু
ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলি। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই ওদেরকে সমবেত করতে সক্ষম।
৩০.
তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা
করে দেন।
৩১.
তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর অভিপ্রায়কে ব্যর্থ করতে পারবেনা এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের
কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই।
৩২.
তাঁর অন্যতম নিদর্শন পর্বত সদৃশ সমুদ্রে চলমান নৌযানসমূহ।
৩৩.
তিনি ইচ্ছা করলে বায়ুকে স্তদ্ধ করে দিতে পারেন; ফলে নৌযানসমূহ নিশ্চল হয়ে পড়বে সমুদ্র
পৃষ্ঠে। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।
৩৪.
অথবা তিনি তাদের কৃতকর্মের জন্য সেইগুলিকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারেন এবং অনেককে তিনি
ক্ষমাও করেন।
৩৫.
আর আমার নিদর্শন সম্পর্কে যারা বির্তক করে তারা যেন জানতে পারে যে, তাদের কোন নিস্কৃতি
নেই।
৩৬.
বস্তুতঃ তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ। কিন্তু আল্লাহর নিকট
যা আছে তা উত্তম ও স্থায়ী - তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর
করে।
৩৭.
যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ হতে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাবিষ্ট হয়েও ক্ষমা করে দেয়
৩৮.
যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের
মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে
৩৯.
এবং যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে
৪০.
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ দ্বারা এবং যে ক্ষমা করে ও আপোষ-নিস্পত্তি করে তার পুরস্কার
আল্লাহর নিকট রয়েছে। আল্লাহ যালিমদের পছন্দ করেন না।
৪১.
তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হবেনা।
৪২.
শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে
অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
৪৩.
অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয় তাতো হবে দৃঢ় সম্পর্কেরই কাজ।
৪৪.
আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন অভিভাবক নেই। যালিমরা যখন শাস্তি প্রত্যক্ষ
করবে তখন তুমি তাদেরকে বলতে শুনবেঃ প্রত্যাবর্তনের কোন উপায় আছে কি?
৪৫.
তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তাদেরকে (জাহান্নামের সামনে) উপস্থিত করা হচ্ছে, লাঞ্ছিত
ও অপমানিত অবস্থায়। মুমিনরা কিয়ামত দিবসে বলবেঃ ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা নিজেদের ও নিজেদের
পরিজনবর্গের ক্ষতি সাধন করেছে। জেনে রেখ, যালিমরা ভোগ করবে স্থায়ী শাস্তি।
৪৬.
আল্লাহ ব্যতীত তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তাদের কোন অভিভাবক থাকবেনা এবং আল্লাহ যাকে
পথভ্রষ্ট করেন তার কোন গতি নেই।
৪৭.
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দাও সেই দিন আসার পূর্বে যা আল্লাহর বিধানে
অপ্রতিরোদ্ধ, ‘যেদিন তোমাদের কোন আশ্রয়স্থল থাকবেনা, আর না (তোমাদের পাপ) অস্বীকার
করার সুযোগ থাকবে।’
৪৮.
তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমাকেতো আমি তাদের রক্ষক করে পাঠাইনি। তোমার
কাজতো শুধু প্রচার করে যাওয়া। আমি মানুষকে যখন অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন
সে উৎফুল্ল হয় এবং যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের বিপদ আপদ ঘটে তখন মানুষ হয়ে যায়
অকৃতজ্ঞ।
৪৯.
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে
ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।
৫০.
অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা। তিনি সর্বজ্ঞ,
সর্বশক্তিমান।
৫১.
মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার
অন্তরাল ব্যতিত, অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা
ব্যক্ত করে। তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।
৫২.
এভাবে আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি রূহ তথা আমার নির্দেশ; তুমিতো জানতেনা কিতাব
কি ও ঈমান কি! পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে
ইচ্ছা পথ-নির্দেশ করি; তুমিতো প্রদর্শন কর শুধু সরল পথ;
৫৩.
সেই আল্লাহর পথ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার মালিক। জেনে রেখ, সকল বিষয়ের
পরিণাম আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত:- বয়কট উত্তরণ মুহাম্মদকে স্থিরতা
দেয় ৬ মাসের জন্য! ৬ মাস পরের ২টি মৃত্যু ভীত নড়িয়ে দেয় মুহাম্মদের। দশ বছর সময়ে কখনই
কুরাইশদের বিরোধীতা মুহাম্মদের শরীর ছুতে পারেনি, কিন্তু বয়কট উত্তরণের মাত্র ৬ মাস
পর থেকে মুহাম্মদ মক্কায় প্রবেশাধিকার হারিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে মানুষে পরিনত
হতে বাধ্য হন। মুহাম্মদের মনোজগতের এতটাই পরিবর্তন ঘটে এ সময়ে, একজন আত্মমগ্ন মানুষ
থেকে তিনি হয়ে ওঠেন আবর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অনুসারী প্রেমী মানুষ আর বাদবাকী সবার জন্য
সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী! সবই আসবে সামনে
নতুন অধ্যায়ে, অপেক্ষায় থাকুন!
(চলবে)
Waiting........
উত্তরমুছুন-TruthToSaveGeneration
অামিও Waiting
মুছুন