ইসলাম
মতে কোন ব্যক্তি বিয়ে করে সঙ্গমের পূর্বেই যদি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয় তবে সেই স্ত্রীর
আগের ঘরের কন্যাকে সে বিয়ে করতে পারবে। একইভাবে পুরুষটির জন্য তার শাশুড়িও হারাম নয়
যতক্ষণ পর্যন্ত সে বিয়ে করা স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করেনি। শুধুমাত্র বিবাহ বন্ধন দ্বারা
শাশুড়ি হারাম হয় না! শেরে খোদা হযরত আলী (রা:) মত দেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন মেয়েকে
বিয়ে করে সঙ্গম করার আগেই তালাক দিয়ে দেয় তবে তার জন্য সেই মেয়ের মা হালাল। হযরত আলী
স্ত্রীর অপর পক্ষের কন্যাকে বিয়ে করা যাবে এই শর্তে মত দিয়েছেন যদি সেই কন্যা নিজগৃহ
পালিত না হয়। হযরত আবু বকর ইনবে কিনানা (রা:) তার নিজের জীবনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে
এ বিষয়ে বলেছেন, তার পিতা তাকে যে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন তার সঙ্গে বাসরঘর হবার আগেই
শ্বশুড় মারা গেলে তার শাশুড়ি বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে যান। তখন তার বাবা তার স্ত্রীকে
তালাক দিয়ে তার মাকে অর্থ্যাৎ শাশুড়িকে বিয়ে করতে তাকে আদেশ দেন। তখন তিনি হযরত ইবনে
আব্বাস (রা:)-কে এই বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ কি জানতে চাইলে তিনি মত দেন শাশুড়িকে বিয়ে
করা যাবে। কিন্তু যখন হযরত ইবনে ওমর (রা:)-কে একই বিষয়ে তিনি জিজ্ঞেস করে মত চান তখন
ওমর বলেন, তুমি তাকে বিয়ে করতে পারো না। দুজন ইসলামি শাস্ত্রবিশারদের এরকম ভিন্ন দুটি
মতামত তখন তিনি তার পিতাকে জানন। তার পিতা তখন সেই মত দুটি লিখে খলিফা মুয়াবিয়ার ফতোয়া
জানতে পাঠিয়ে দেন। মুয়াবিয়া এই বিষয়ে মত দিতে তার অপারগতা জানিয়ে চিঠি দেন। শেষ পর্যন্ত
এই বিয়ে থেকে বিরত থাকাই সিদ্ধান্ত হয় একই বিষয়ে বিতর্কিত মতামত থাকায়। (ইবনে কাথিরের
তাফসির, সুরা নিসা, ৪, ৫, ৬, ৭ খন্ড একত্রে, পৃষ্ঠা-৩৩৪)।
কিন্তু
বিতর্কের শেষ হয় না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা:) বলেন, সঙ্গম না হলে তালাক প্রাপ্ত
স্ত্রীর মাতা ও কন্যাকে বিয়ে করা জায়েজ। হযরত ওমরকে দাসী ও দাসীর কন্যাকে সঙ্গম করা
যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি মত দেন, একই বিষয়ে কুরআনে হালাল ও হারাম দুরকম মতই দেয়া
আছে। তাই আমি এটা কখনোই করব না। (ইবনে কাথিরের তাফসির, সুরা নিসা, ৪, ৫, ৬, ৭ খন্ড
একত্রে, পৃষ্ঠা-৩৩৭)। সম্প্রতি ইরানী শরীয়া আইনে পালিতা কন্যাকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়া
হয়েছে। এই অনুমতি দেয়ার অন্যতম কারণ হযরত আলীকৃত মাসায়ালাগুলোর মত এই রূপই। কিন্তু
আমাদের আলোচনা আসলে এটা প্রমাণের চেষ্টা নয় যে ইসলাম একজন মুমিনকে তার শাশুড়ি ও পালিত
কন্যাকে বিয়ে করতে অনুমোদন দেয়। আমি বরং সব ইসলামী সোর্স ঘেঁটে এই মতটাই মেনে নিয়েছি
যে, ইসলাম শাশুড়ি ও পালিতা কন্যা বা স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে।
যদিও কুরআন এই নিষেধকে শর্ত আরোপ করেছে। যেমন: যদি স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম না হয় তাহলে
স্ত্রীর মাতা ও অপর পক্ষের কন্যাকে বিয়ে করা হারাম নয়। বিষয়টি রুচি ও নৈতিকতার দিক
দিয়ে যে কুৎসিত তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবু এটা কুরআনের মন্দের ভালই বলতে হবে।
আল্লাহ
বলেন, তোমাদের প্রতিপালিত কন্যারা তোমাদের জন্য হারাম যারা তোমাদের গৃহে পালিত হয়েছে
যদি তাদের মাতাদের সঙ্গে তোমাদের সঙ্গম হয়ে থাকে। সহি বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে রয়েছে
উম্মে হাবিবা (রা:) বলেন, হে আল্লার রসূল আপনি আমার বোনের কন্যা ইযযাহকে বিয়ে করুন।
জবাবে রসূল্লাহ বলেন, না, সে আমার জন্য হারাম। এরপর উম্মে হাবিবা বলেন, আমি তো শুনেছি
আপনি আবু সালমার মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন? রসূল্লাহ উত্তর দেন, উম্মে সালমার কন্যা
আমার উপর হারাম কারণ তার কন্যা আমার প্রতিপালিতা। আমার ঘরেই সে লালিত পালিত হয়েছে।