বইমেলাতে
ইসলামী ফাউন্ডেশনের স্টল আছে। এটা ছাড়াও বেশ কিছু ইসলামী প্রকাশনীর স্টল দেখা যায়।
এসব স্টলে ইমাম বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি’র হাদিস, ইবনে হিশাম ও ইসহাকের নবী জীবনী সুলভে
মিলে। পুলিশ প্রসাশন থেকে এবার বলে দেয়া হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতি বা গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব
সৃষ্টিতে উসকানি দেয় এমন বই প্রকাশের ওপর নজরদারি করবে পুলিশ। উপরে যে বইগুলোর কথা
বললাম সেগুলোতে ইহুদীদের প্রতি চরম ঘৃণা, অভিশাপ, উশকানি, হত্যার বৈধতা পাতায় পাতায়
ছড়িয়ে আছে। মূর্তিপুজারীদের একইভাবে আক্রমন করা হয়েছে। এই বইগুলো পড়লে যে কোন অমুসলিম
ধর্ম বিশ্বাসীর মনে আঘাত লাগার কথা। সবচেয়ে বড় কথা মুসলমানরা প্রগাঢ় বিশ্বাস থেকে এই
বইগুলি পড়লে একজন ইহুদী-খ্রিস্টানকে, একজন হিন্দু-বৌদ্ধকে চরম ঘৃণার চোখে দেখবে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বিসিসি’র কাছে বলেছেন, যে কোন
ধর্মকে কটাক্ষ করে কিংবা অবমাননা করে কোন লেখা সমর্থনযোগ্য হতে পারেনা…। মামুন স্যার ইবনে হিশাম পড়েছেন
নিশ্চয়? একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে উনার কাছে বনু কুরাইজা ঘটনাকে গণহত্যা নাকি ম্যাসাকার
মনে হয়েছে? উনি কি ইসলামী ফাউন্ডেশনের স্টলে বিক্রিত বইগুলোকে সমর্থনযোগ্য মনে করেন?
ইবনে
হিশামের ‘সীরাতুন নবী’ যদি অবাধে বিক্রি হতে পারে তাহলে আলী দাস্তিরের ‘নবী মুহাম্মদের
২৩ বছর’ কেন নিষিদ্ধ হবে? ইবনে হিশাম, ইসহাক, ইমাম বুখারীতে ইহুদী কন্যা সাফিয়া ও তার
বোনকে টেনে হেঁছড়ে নবীর কাছে আনার দৃশ্য’র বর্ণনা আছে। সাফিয়ার কাজিন যখন চিৎকার করে
কাঁদছিল তখন নবী হংকার দিয়ে বলেছিল, এই ডাইনিটাকে আমার সামনে থেকে দূর করে নিয়ে যাও!
বনু কুরাইজার ৭০০ বালক আর পুরুষকে হত্যা করে গর্তে মাটি চাপা দেয়ার বর্ণনা ইবনে হিশামে
আছে। ইহুদী নারীদের ক্রীতদাসী বানানো, তাদের গণহারে রেপ করার রগরগে বর্ণনা সীরাতের
মত নবী জীবনীগুলো থেকেই জানা যায়। খুব সহজেই এসব বই ইসলামী ফাউন্ডেশনের স্টল থেকে যে
কেউ কিনতে পারবে। এমনকি কোলকাতার বইমেলাতে বাংলাদেশ সরকার এইসব বই বিক্রি করার জন্য
ইসলামী ফাউন্ডেশনকে সেখানে পাঠিয়েছে। কি করে অমুসলিমদের দাসে পরিণত করে তাদের নারীদের
গণিমতের মাল করে মুসলমানরা ভোগ করবে তার জন্য বুখারী শরীফে আলাদা চ্যাপ্টার আছে। মূর্তি
ভাঙ্গার জন্য আমি পৃথিবীতে এসেছি- এমন প্রতিক্রিয়াশীল উক্তি এসব বইতে থাকার পরও এগুলো
‘ধর্মীয় অনুভূতি বা গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টিতে উসকানি’ দেবে না?
আমি
বইমেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ সব ধরণের ইসলামী প্রকাশনী থাকার পক্ষে। সব ধরণের বই প্রকাশ
ও বিপনণের পক্ষে। ইবনে হিশাম, বুখারী শরীফ বিক্রি হতে পারলে ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইও বিক্রি
করতে দিতে হবে। জাফর ইকবাল-শামসুজ্জামান খান গংদের জানা উচিত ইসলাম বিতর্ক বইয়ের তথ্য
ইবনে হিশাম-বুখারী শরীফ থেকেই নেয়া। আসল কথা হচ্ছে উনাদের অবস্থান অতিতেও হুমায়ুন আজাদ,
আহমদ শরীফদের পক্ষে ছিল না। বাংলাদেশে আওয়ামী সমর্থক মৃদু ইসলামী মাইন্ডের হালকা ধর্মনিরপেক্ষতার
সঙ্গে ঝাপসা গণতান্ত্রিক চেতনার যে উগ্র বাংলাদেশী মুসলমানী জাতিসত্ত্বার ককটেল বুদ্ধিজীবীর
অস্তিত্ব আছে- এরাই স্বঘোষিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমাদের এখানে পরিচিতি পেয়েছিলো।
এদের উল্লেখযোগ্য অংশ হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বরের দর্শনের বিরোধী।
বইমেলায় সেন্সরশীপের চেষ্টা আর কিছু না ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ধরণের বই যাতে কেউ প্রকাশ
করতে না পারে। অভিজিৎ রায়, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফদের মতন মুক্তচিন্তার নতুন প্রজন্মের
লেখকরা যাতে আত্মপ্রকাশ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা…।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন