১.
নাস্তিক কেন 'জঙ্গি'?
শিরোনামটা দাঁড়ালো "স্বামী কেন আসামী?" ধাঁচের
লক্ষ্য করেছেন, ধর্ম আর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে যে-কাউকেই "জঙ্গি নাস্তিক" বলা হয়ে থাকে? সরব নাস্তিকদেরকে জঙ্গি মুসলিম, জঙ্গি খ্রিষ্টান, জঙ্গি হিন্দু বা অন্য যে-কোনও ধর্মীয় জঙ্গিদের সঙ্গে এক কাতারে ফেলার এই যুক্তিরহিত ভিত্তিহীন প্রবণতা শুধু বিশ্বাসীদের মধ্যেই আছে, তা কিন্তু নয়। কিছু অজ্ঞেয়বাদীও, ভারি অবাক হই, এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করে থাকে।
ভিত্তিহীন বললাম এই কারণে যে, বিভিন্ন ধর্মবাদী জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কথিত "জঙ্গি" নাস্তিকদের কর্মকাণ্ডের মিল একেবারেই নেই। নাস্তিক্যবাদের নামে কে কবে কোথায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে? কে বোমাবাজি, সন্ত্রাস করেছে? কে মানুষহত্যা করেছে? বিমান নিয়ে ঢুকে পড়েছে উচ্চ অট্টালিকায়?
নাস্তিক্যবাদের নামে পৃথিবীতে কবে, কোথায় এক বিন্দু রক্তপাত হয়েছে, বলতে পারবেন কেউ? এ প্রসঙ্গে কিছু স্থুলবুদ্ধি, নির্বোধ ব্যক্তি হিটলার, স্তালিন এবং মাও-য়ের ঘটানো ধ্বংসযেজ্ঞর উদাহরণ টেনে আনতে পছন্দ করেন। প্রথমত, হিটলার নাস্তিক ছিলেন না। প্রমাণ? এখানে দেখুন এবং ছোট ছোট বর্ণনাগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিন। আর তার চেয়ে বড়ো কথা, হিটলার যদি নাস্তিক হতেনও, তবুও তাঁকে জঙ্গি নাস্তিক বলা যেতো না, কারণ তিনি তাঁর মানবতাবিরোধী অপকর্মগুলো নাস্তিক্যবাদের নামে করেননি। একই কথা খাটে স্তালিন বা মাও-য়ের ক্ষেত্রে। তাঁরা লক্ষ-কোটি লোক হত্যা করেছেন, তা সর্বজনবিদিত। কিন্তু এই ভ্রষ্টাচার তাঁরা কি নাস্তিক্যবাদের নামে করেছেন? ধরা যাক, এক ধর্মবিশ্বাসী মুসলমান জমি সংক্রান্ত জটিলতায় খুন করলো তার প্রতিবেশীকে। সেই হত্যাকারীকে জঙ্গি মুসলমান বলা কি উচিত হবে? অবশ্যই না।
আসলে দীর্ঘকাল ধরে ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাসকে শক্ত প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু ধর্মের একচ্ছত্র আধিপত্য এখন হুমকির মুখে। যতো দিন যাবে, ধর্মের প্রভাব-বলয় ততো সংকুচিত হয়ে পড়বে। পড়বেই। সেটি বুঝতে বাকি নেই বিশ্বাস-বেচে-খাওয়া পরজীবীগুলোর। আর তাই ধর্মবিরোধীদের বিরুদ্ধে চালানো প্রোপাগান্ডা চালাতে প্রচার করা হয়েছে এবং হচ্ছে "জঙ্গি নাস্তিক" শব্দবন্ধটি।
answerbag নামের এক সাইটে একজন প্রশ্ন করেছে: Why is atheism so aggressive? পাঠকদের কিছু কিছু উত্তর উদ্ধৃত করছি:
... Athiests don't wage war against people trying to force them into the same beliefs they themselves hold. The same cannot be said for religious people. So who is really the aggresive group?
... Really? Who are the ones going out there to preach and try to convert people? Who are the ones who try to make laws to impose their views onto others? Who are the ones that run societies based on theism where oppression and violence thrieve? It is definitely not atheists. You can point out to Stalin, but Stalin was a political leader looking to gain power. His atheism was no more than dissent for the churches who did not support his agenda rather than utter unbelief. Atheists are for live and let live. You can lock yourself at a church and pray all you want, we don't care but don't try to impose your views on me (i.e. abortion, gay marriage, prostitution, etc, etc).
... the truth hurts .. so it just seems like we are more agressive , due to the larger "impact" our words have ;-)
plus,.. when one is "hitting back " one tends to add a little extra umph to the returning blow.
... Why are theists always asking these pointless question to make themselves feel better or slightly superior?
quite pathetic to be honest.
Go worship your thing and stick with your own bullshit, atheists are neutral cause we just don't care.
... I like the irony of a passive aggressive question asking why others are so aggressive.
There's nothing aggressive about atheism, particularly when comparing with theism. When your brand of supersition has gotten a criticism-free ride for as long as it has, any dissenting opinion sounds "aggressive" to those with a deflated standard for objectivity.
... To maintain balance against theists.
... I think it's mostly defensive and passive. Believing fervently in God...now that's usually aggressive...and destructive.
... To counter the agressiveness of the God-Gobbers.
নিচের ভিডিওতে রিচার্ড ডকিন্স আরও স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, নাস্তিক কেন জঙ্গি নয়। কারণ:
... There's no logical pathway leading from atheism to violence. There, more certainly, are pathways leading from religion to violence.
...The nearest we get to violence is in the words we use. .. It's a grave misuse of the word extremism to say that atheists are just as extreme as religious extremists.
২.
ভিডিও: জঙ্গি নাস্তিকের জবানবন্দি
ভিডিওতে উচ্চারিত শেষ বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করতে চাই আমিও: “Why the hell aren’t more of us speaking up?”
৩.
জঙ্গি নাস্তিক্যবাদ প্রসঙ্গে রিচার্ড ডকিন্স
চতুর্পাশে সর্বক্ষণ ধর্মবিশ্বাসী-পরিবৃত থেকে আমরা, নির্ধামিকেরা, আমাদের অধিকারের কথা ভুলতে বসেছি। আমাদেরকে নিয়ত নিশ্চুপ থাকতে দেখে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। রিচার্ড ডকিন্স বলছেন, সময় এসেছে আমাদের অস্তিত্বের জানান দেয়ার, অধিকার আদায়ের। ভিডিওটি ২০০২ সালের।
তাঁর বক্তব্যের সারকথা বক্তৃতার শেষ লাইনে: People are always going on about, "How did September the 11th change you?" Well, here's how it changed me. Let's all stop being so damned respectful.
লক্ষ্য করুন, ভিডিওটি বাংলা সাবটাইটেলসহ দেখার ব্যবস্থা আছে।
ডাউনলোড লিংক (অডিও: ১১ মেগাবাইট)
ডাউনলোড লিংক (ভিডিও: ৯৪ মেগাবাইট)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ডাউনলোড করা ভিডিওতে সাবটাইটেল দেখা যাবে না।
৪.
ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদের নিরাময় যেভাবে সম্ভব
এবং এই কারণেই...
৫.
আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত সশস্ত্র জঙ্গি নাস্তিক
৬.
শালা, জঙ্গি নাস্তিক
অনুবাদ ও ফটোমাস্তানি: ধর্মের ষাঁড় ও কৌস্তুভ
৭.
জঙ্গির রকমফের
৮.
নাস্তিক কেন 'গোঁড়া'
একটি অলীক শব্দবন্ধের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়: "গোঁড়া নাস্তিক" । ব্যবহারকারীরা নাস্তিক-এর সংজ্ঞাটি সঠিকভাবে জানলে বুঝতে পারতেন, "গোঁড়া" শব্দটির সঙ্গে "নাস্তিক"-এর ব্যবহার অর্থগতভাবে অসম্ভব।
তাকেই নাস্তিক বলা হয়, যে-ব্যক্তি একেবারে কোনও ধরনের প্রমাণ না থাকার কারণে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষীয় দাবিতে অনাস্থা জ্ঞাপন করে। এর বেশি কিছু নয়।
কেউ কি আমাকে বুঝিয়ে বলবেন, যুক্তি-তথ্য-প্রমাণহীন দাবিতে অবিশ্বাস প্রকাশের ভেতরে গোঁড়ামির স্থানটি কোথায়? পক্ষান্তরে, প্রকট প্রমাণ, জুতসই যুক্তি, তর্কাতীত তথ্য উপেক্ষা করে ("বুঝি, কিন্তু মানি না" টাইপ) ভিত্তিহীন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে থাকাটাই কিন্তু গোঁড়ামি। ভুয়া দাবিকে অস্বীকৃতি জানানোয় গোঁড়ামির গ-ও নেই।
যদি কখনও ঈশ্বরের অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়, এবং তারপরেও যদি কোনও নাস্তিক থেকে থাকে ধরাধামে, যে তার মত পরিবর্তনে ঘোর অনীহ, শুধু তখনই তাকে গোঁড়া বলা যাবে, তার আগে নয়। কোনওমতেই।
৯.
নাস্তিকের জঙ্গিত্ব
গণহত্যা, সন্ত্রাস, আত্মঘাতী হামলা বা ইত্যাকার বর্বরতাময় অপকর্ম না করা পর্যন্ত কোনও আস্তিক 'জঙ্গি' আাখ্যা পায় না। তবে একজন নাস্তিকের জন্য এই খেতাব কিন্তু বড়োই অনায়াসলভ্য। কোনও কর্মগুলো সাধন করার প্রয়োজন তার নেই; শুধু নিচের অন্তত একটি বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ হলেই 'জঙ্গি' তকমাপ্রাপ্তি ঘটবে তার:
- ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্নাতীত প্রমাণ চাইতে হবে।
- তথাকথিত এশী কিতাবগুলোয় উল্লেখিত অমানবিক ও নারীবিদ্বেষী বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ দাবি করতে হবে।
- এশী কিতাবগুলোর জলজ্যান্ত অসঙ্গতি তুলে ধরতে হবে।
- ধর্মগুলোর ক্ষতিকারক দিকগুলো আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে।
- ধর্মগুলোর রক্তাক্ত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
- প্রেরিত পুরুষ হিসেবে দাবি করা ভণ্ড বা মানসিক বিকারগ্রস্ত নবী-রসুলের চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে তাদেরই জীবনাচরণ উদ্ধৃত করে।
আমি একেবারেই নিশ্চিত, উচ্চকণ্ঠ ও সরব নাস্তিকদেরকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে ধর্মীয় জঙ্গিদের কাতারভুক্ত যারা করে বা করতে চায়, তারা হয় নিরাময়াতীত স্টুপিড ও ইডিয়ট, নয়তো গ্যাঞ্জামবাদী জ্ঞানপাপী।
সুন্দর
উত্তরমুছুন